মূর্ধন্য ধ্বনি বলতে কী বোঝো ? এর উদাহরণ

মূর্ধন্য ধ্বনি বলতে কী বোঝো ? 

এর আগের পোস্টে আমরা ভাষার ধ্বনি ও তার প্রকারভেদ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। স্বরধ্বনির উচ্চারণ ও তার শ্রেণী বিভাগ নিয়েও আলোচনা করেছি। এই পোস্টে আমরা মূর্ধন্য ধ্বনি বলতে কী বোঝো? তা নিয়ে আলোচনা করি।

ভাষার ক্ষুদ্রতম একক হল ধ্বনি। এই ধ্বনি দুই প্রকার, স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।

ব্যঞ্জনধ্বনিকে আবার নানা ভাগে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনিকে উচ্চারণ - স্থান এর দিক থেকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে মূর্ধন্য ধ্বনি একটি।
  • কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয় ধ্বনি
  • তালব্যধ্বনি
  • মূর্ধন্যধ্বনি
  • দন্ত্যধ্বনি
  • ওষ্ঠ্যধ্বনি
এখন প্রশ্ন হলো মূর্ধন্য ধ্বনি বলতে কী বোঝায়? তার আলোচনা করা।

মূর্ধন্য ধ্বনি কি বা কাকে বলে :-

যে ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে জিভের অগ্রভাগ প্রতিবর্তিত হয়ে (অর্থাৎ উলটে গিয়ে) তালুর ঊর্ধ্বতম অংশে আঘাত করে, তাকে মূর্ধন্য ব্যঞ্জন বলা হয়।

আরও পড়ুন :- যৌগিক স্বরধ্বনি কাকে বলে

অথবা আমরা বলতে পারি, যেসব ধ্বনির উচ্চারণস্থান মূর্ধা বা তালুর অগ্রভাগ, তাদের মূর্ধন্যধ্বনি বলে।
মূর্ধন্য ধ্বনি বলতে কী বোঝো
চলিত বাংলায় ট, ঠ, ড্, ঢ় আর ড়, ঢ় মূর্ধন্য ব্যঞ্জনের উদাহরণ। কিন্তু মূর্ধন্য ণ- এর উচ্চারণ বাংলায় মূর্ধন্য নয়, তা দন্ত্য ন- এর মতো।

মূর্ধন্য ধ্বনি কোথা থেকে বা কি ভাবে এল তা দেখা যাক, ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে প্রধান ভূমিকা জিভ আর ঠোঁটের কণ্ঠনালীর স্বরপল্লবের কম্পনে যে-ধ্বনির সৃষ্টি হল, তা স্বরধ্বনির ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয় এবং স্বরধ্বনিই আমরা স্পষ্টভাবে শুনতে পাই।

কিন্তু ব্যঞ্জনের উচ্চারণ এই ধ্বনির নির্গমে বাধা ঘটিয়ে করতে হয়। জিভের দ্বারা মুখের ছাদে অর্থাৎ তালুতে নানা জায়গা ছুঁয়ে কিংবা ঠোঁটদুটি বন্ধ বা কুঁচকে গিয়ে ধ্বনিবাহী বহিগামী বাতাসের পথ রুদ্ধ বা সংকীর্ণ করে যে-ধ্বনির উচ্চারণ ঘটে তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

আরও পড়ুন :- ব্যঞ্জনধ্বনি কি? কয় প্রকার ও উদাহরণ

মনে রাখবেন, ব্যঞ্জনের উচ্চারণ আসলে স্বরের উচ্চারণে বাধা ঘটিয়ে হয়। অধিকাংশ ব্যঞ্জনের উচ্চারণ আসলে নিঃশব্দ। তা আমরা শুনতে পাই না, তার ব্যঞ্জনা বা আভাস পাই মাত্র। সেইজন্যই হয়তো এর নাম ব্যঞ্জন।

ব্যঞ্জনের উচ্চারণে তিনটি মাত্রা লক্ষ করা যায় —

১. ধ্বনিবাহী বায়ুস্রোতে মুখের কোন অঙ্গ বাধা ঘটাচ্ছে, অর্থাৎ উচ্চারক কে ;

২. মুখের কোন্ অংশে (উচ্চারণ- স্থান) এই বাধা ঘটছে, এবং

৩. এই বাধার ধরন (উচ্চারণের প্রকার) কী রকম ?

এই তিনটি উচ্চারণের মাত্রা অনুযায়ীই ব্যঞ্জনধ্বনি গুলির নামকরণ ও শ্রেণীবিভাগ হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ