অপিনিহিতি কাকে বলে? উদাহরণসহ অপিনিহিতি বিষয়টি বুঝিয়ে দাও

শব্দের মধ্যে একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনি বা স্বরধ্বনি নানা ভাবে স্থান পরিবর্তন যখন করে তখন তাকে ধ্বনির স্থানান্তর বলা হয়। এই স্থানান্তর সাধারণত দুই প্রকার যথা-

  1. অপিনিহিতি ও
  2. ধ্বনি বিপর্যয়।
তাহলে এখন প্রশ্ন আসে অপিনিহিতি কি? তা নিয়ে আলোচনা করা।

অপিনিহিতি কাকে বলে :-

অপিনিহিতি শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হল – ( অপি-নি-√ধা-তি) অর্থাৎ শব্দের আগে বসা বা আগে স্থাপন ।

আরও পড়ুন :- সমীভবন কাকে বলে?

শব্দ মধ্যস্থ কোনো ব্যঞ্জন ধ্বনির পর যদি ই-কার বা উ-কার থাকে তবে সেই 'ই' বা 'উ' যদি ব্যঞ্জন ধ্বনির আগে উচ্চারিত হয়ে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটায় সেটাই হল অপিনিহিতি

"শব্দের মধ্যে ই’ বা ‘উ’ থাকলে, সেই ‘ই’ বা ‘উ’ যথা—নির্দিষ্ট স্থানের আগেই উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে।"
অপিনিহিতি কাকে বলে

উদাহরণসহ অপিনিহিতি বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া হলো -

১. ‘ই’ কারের অপিনিহিতি উদাহরণসহ :

রাতি > রাইত। আজি > আইজ। করিয়া > কইর‍্যা। গাঁটি > গাইট। পাখি > পাইখ। চারি > চাইর।

২. 'উ’ কারের অপিনিহিতি উদাহরণসহ :

মাথুয়া > মাউথুয়া। মাঠুয়া > মাউঠুয়া। মাছুয়া > মাউছুয়া। নাটুয়া > নাউটুয়া। সাধু>সাউধ। ভাতুয়া > ভাউতুয়া।

অপিনিহিতি নামটি দেন ভাষাচার্য ড. সুনীতিকুমার। উপরে আলোচিত অপিনিহিতি কাকে বলে তা কিন্তু তাঁরই দেওয়া। পশ্চিমবাংলার ‘রাঢ়ী' উচ্চারণে এখন অপিনিহিতি মেলে না। এখন বাংলাদেশের লোকেদের মৌখিক উচ্চারণে অপিনিহিতি প্রচুর।

আরও পড়ুন :- সারমর্ম বলতে কি বুঝায়?

তবে রাঢ়েও যে একদা অপিনিহিতি ছিল, তার প্রমাণ মেলে মুকুন্দের চণ্ডীমঙ্গলে: “কার সনে দ্বন্দ্ব ‘কইর‍্যা’ চক্ষু কৈলা রাতা।” কিংবা লোচন দাসের গানে : “আঁখির জলে বুক ভিজিল 'ভাইস্যা' গেল পাটা।”

বাংলায় অপিনিহিতির প্রচলন চতুর্দশ শতাব্দী থেকেই দেখা যায়। পূর্ববঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় অপিনিহিতি এখন ও বিদ্যমান। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শিষ্ট উচ্চারণে এই রীতি হয় লুপ্ত হয়েছে অথবা অভিশ্রুতিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ