উপন্যাস কাকে বলে বা কি | উপন্যাস কত প্রকার ও কি কি এবং উপাদান সমূহ

উপন্যাস (uponnash kake bole) বলতে এমন একটি বিশেষ সাহিত্য সৃষ্টি বোঝায় যাতে লেখকের জীবনদর্শন ও জীবনানুভূতি কোন বাস্তবকাহিনি অবলম্বনে বর্ণনাত্মক শিল্পকর্মে রূপায়িত হয়। সমগ্র জীবনের প্রতিচ্ছবি এতে ফুটে ওঠে বলে এর পটভূমি থাকে বিস্তৃত।

ব্যাপকতর আকৃতি, সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘটনাবিন্যাস, আকর্ষণীয় গল্পরস, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চরিত্রসৃষ্টি, মনোমুগ্ধকর বর্ণনাভঙ্গি, সাবলীল সংলাপ ইত্যাদি লক্ষণ সার্থক উপন্যাসে অভিপ্রেত।

উপন্যাসের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, এতে কোন একটি কাহিনির বর্ণনাই প্রধান হয়ে থাকে। মানব জীবনের ঘটনাবলির বর্ণনাদানের সঙ্গে সঙ্গে জগৎ ও জীবনসম্পর্কিত লেখকের বিচিত্র উপলব্ধি উপন্যাসের মধ্যে প্রকাশ পায়।

আরও পড়ুন :- কমেডি নাটক কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য?

উপন্যাসের ইংরেজি প্রতিশব্দ Novel শব্দটি ইংরেজিতে এসেছে ইতালিয় শব্দ novella থেকে, আর এর অর্থ হচ্ছে tale, piece in news।
'উপন্যাস' শব্দটি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় উপ+নি+অস; অর্থাৎ 'উপ' পূর্বক, 'নি' পূর্বক, 'অস' ধাতুর সঙ্গে 'অ' প্রত্যয় যোগে ‘উপন্যাস' শব্দটি গঠিত, যার অর্থ 'উপন্যাস'।
বাংলা উপন্যাস কি বা কাকে বলে | বিখ্যাত সেরা উপন্যাস বই pdf

উপন্যাস কি বা কাকে বলে :-

গ্রন্থকারের ব্যক্তিগত জীবন দর্শন ও জীবনানুভূতি কোন বাস্তব কাহিনীকে অবলম্বন করে যে বর্ণনাত্মক শিল্পকর্মে রূপায়িত হয়, তাকে উপন্যাস বলে। 

উপন্যাসের সংজ্ঞার্থ নির্ণয় করে J. A Cuddon তাঁর 'Dictionary of literary terms'-এ লিখেছেন -

"It is a form of story of prose narrative containing characters, action and incidents and perhaps a plot. অন্যভাবে বলা যায়, Novel is a fictitious prose narrative or tale presenting a picture of the man and women portrayed."


উপন্যাস কত প্রকার ও কি কি :-

বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয় উপন্যাসের উপজীব্য বলে উপন্যাসের শ্রেণীবিভাগএও বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়েছে। উপন্যাসের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে অনেকের মধ্যেই মতভেদ রয়েছে ।


  1. ঐতিহাসিক উপন্যাস
  2. সামাজিক উপন্যাস
  3. আঞ্চলিক উপন্যাস
  4. রাজনৈতিক উপন্যাস
  5. পৌরাণিক উপন্যাস
  6. কাব্যধর্মী উপন্যাস
  7. আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস
  8. নকশা ধর্মী উপন্যাস
  9. রোমান্স ধর্মী উপন্যাস
  10. হাস্যরস উপন্যাস
  11. ডিটেকটিভ বা রহস্য উপন্যাস

ঐতিহাসিক উপন্যাস কাকে বলে :-

ঐতিহাসিক উপন্যাস বলতে সেই উপন্যাসগুলোকে বোঝায় যার ঘটনাবলী ও চরিত্রগুলো কোনও না কোনওভাবে ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।

কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা বা ব্যক্তিকে নিয়ে লেখকের কল্পনার উড়ালে রচিত উপন্যাসকেই ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা হয়। এখানে ইতিহাস হলো উপন্যাসের প্রেরণা এবং প্রাথমিক উপাদান।

যেমন:

১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুর্গানাথ, কাপালকুণ্ডলা

২. সরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পুঁজিপতি

৩. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সৈনিকালীন, আরণ্যক

এসব উপন্যাস ইতিহাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।

সামাজিক উপন্যাস কাকে বলে :-

সামাজিক উপন্যাস বলতে সেই উপন্যাসগুলোকে বোঝায় যার মূল বিষয়বস্তু হলো কোনও না কোনও সমাজ বা সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা।

সামাজিক উপন্যাসে সামাজিক ব্যাপারগুলো যেমন সামাজিক প্রথা, রীতি-নীতি, মান-মর্যাদা, সংস্কৃতি, ধর্ম ইত্যাদির পাশাপাশি দারিদ্র্য, শোষণ, নারী নির্যাতন এবং বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয়।

কিছু উদাহরণ:

১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুর্নীতি, স্বামী

২. শরত্‌চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পাত্রলীর প্রতিমূর্তি

৩. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাচীর

এ ধরনের উপন্যাসগুলো বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে প্রচার করে এবং সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।

আঞ্চলিক উপন্যাস কাকে বলে :-

আঞ্চলিক উপন্যাস বলতে সেই সকল উপন্যাসকে বোঝায় যার ঘটনাবলী এবং প্রধান চরিত্রগুলো নির্দিষ্ট কোনো এলাকা বা আঞ্চলিক জীবনযাত্রার সাথে জড়িত।

আঞ্চলিক উপন্যাসে সেই নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা, রীতি-নীতি, ভাষা-ভাবনা এবং সংস্কৃতির স্বতন্ত্র প্রতিফলন ঘটে। এই উপন্যাসগুলোতে সেই আঞ্চলিকতার স্বাদ রয়েছে।

কিছু উদাহরণ:

১. শরত্‌চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী (ম্যাগুড়া আঞ্চলিকতা)

২. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের দাওয়াত (ম্যাগুড়া আঞ্চলিকতা)

৩. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাত্রলীর মেয়ে (বীরভূম আঞ্চলিকতা)

এগুলোতে নির্দিষ্ট এলাকার ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

রাজনৈতিক উপন্যাস কাকে বলে :

রাজনৈতিক উপন্যাস বলতে সেই ধরনের উপন্যাসগুলোকে বোঝায় যেগুলোর মূল উপাদান হলো রাজনীতি। এই উপন্যাসগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনীতিবিদদের চরিত্র, রাজনীতির প্রভাব ইত্যাদির বিশদ বর্ণনা থাকে।

কিছু উদাহরণ:

১. সরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রামমোহনের দ্বারপাল

২. শরত্‌চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সৈনিকালীন

৩. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেশের মাটি

এসব উপন্যাসে সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলীয় রাজনীতির প্রভাবের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

পৌরাণিক উপন্যাস কাকে বলে :

পৌরাণিক উপন্যাস বলতে সেই উপন্যাসগুলোকে বোঝায় যার বিষয়বস্তু পৌরাণিক বা ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত কোনও ঘটনা, পুরাণে উল্লেখিত কোনও পাত্র বা সেগুলোর উপর আধারিত।

পৌরাণিক উপন্যাসে পুরাণের ঘটনা ও চরিত্রগুলোকে আধুনিক চিত্রায়নের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। এখানে একটা সমন্বয়ভাব তৈরি করে নতুন মাত্রা ও গভীরতা যুক্ত করা হয়।

কিছু উদাহরণ:

১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্তিকা

২. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবীচন্ডী

৩. ঋতুপর্ণ ঘোষের জয়তি

কাব্যধর্মী উপন্যাস কাকে বলে :

কাব্যধর্মী উপন্যাস বলতে সেই উপন্যাসগুলোকে বোঝায় যেগুলো গদ্য হলেও কাব্যধর্মী উপাদান বেশি থাকে।

এতে ঘটনার তুলনায় চরিত্র, প্রকৃতি, মনোভাব বর্ণনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভাষার ব্যবহারে কাব্যধর্মী সৌন্দর্য রয়েছে। গদ্য উপর কাব্যধর্মী প্রভাব প্রকাশ পায়।

কিছু উদাহরণ:

১. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাচীর

২. বিবেকানন্দ দত্তের ছেলেমেয়েরা

৩. শরত্‌চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষোদ্ধার

এগুলোতে গদ্যের মধ্যে কাব্যধর্মী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস কাকে বলে :

আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস বলতে সেই ধরনের উপন্যাসগুলোকে বোঝায় যেগুলোতে লেখকের নিজের জীবনের অংশবিশেষ বা সম্পূর্ণ জীবনকাহিনীকেই ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে উপন্যাস।

এখানে লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, স্মৃতি এবং বাস্তব জীবনের ঘটনাপ্রবাহই হয় উপন্যাসের বিষয়বস্তু। তাই এতে বাস্তবতার ছাপ থাকে এবং লেখকের ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ ঘটে।

কিছু উদাহরণ:

১. বিবেকানন্দ দত্তের আমার সোনার বাংলা

২. জগদীশ গুণের কালপুরুষ

৩. সমরেশ বসুর নীল আকাশের নীচে

নকশা ধর্মী উপন্যাস কাকে বলে:

নকশা ধর্মী উপন্যাস বলতে সেই উপন্যাসগুলোকে বোঝায় যাতে নাটকের মত প্রবন্ধ, কথোপকথন এবং অভিনয় দিয়ে গল্পটি গড়া হয়েছে।

এর বৈশিষ্ট্যগুলো:

১. অভিনয় সহ কথোপকথনের মাধ্যমে গল্প বলা হয়।

২. পাত্রগুলোর মধ্যে সংলাপ হয়, যা নাটকের মতো।

৩. ঘটনা এবং পরিবেশ বর্ণনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় চরিত্র চিত্রায়ন ও মনোভাব তুলে ধরা।

৪. প্রায়ই থিয়েটার, অভিনয় ও কথোপকথনের মত প্রকৃতির হয়।

এই ধরনের উপন্যাসকে নাটকধর্মী উপন্যাসও বলা হয়।

রোমান্স ধর্মী উপন্যাস কাকে বলে:

রোমান্স ধর্মী উপন্যাস বলতে সেই উপন্যাসগুলোকে বোঝায় যাতে প্রেম, ভালোবাসা ও যৌন আকর্ষণ প্রধান বিষয়বস্তু।

এর বৈশিষ্ট্যগুলো:

১. রোমান্টিক/প্রেমের কাহিনী।

২. নায়ক-নায়িকার মধ্যে ভালোবাসা।

৩. সহজ, আকর্ষণীয় ভাষার ব্যবহার।

৪. প্রায়ই শৃংগার, উত্তেজনামূলক।

৫. উপন্যাসের শেষাংশে সুখী শেষ বা happy ending।

রোমান্স ধর্মী উপন্যাসের কিছু উদাহরণ:

১. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাপালকুণ্ডলা

২. শরত্‌চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষের কবিতা

৩. সত্যজিৎ রায়ের প্রতিমার বউ

৪. উপেন্দ্রনাথ অশ্বের নীলধনুষ

৫. আশাপুরন দেবীর প্রতিমায়ের স্বপ্ন

এসব উপন্যাসে প্রেম-কাহিনী এবং রোমান্স প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

হাস্যরস উপন্যাস :-

হাস্যরস প্রধান উপন্যাসে একটি অসাধারণ দৃষ্টিকেন্দ্র থেকে জীবনের পর্যবেক্ষণ এবং তার প্রচলিত গতির মধ্যে বক্ররেখা ও সূক্ষ্ম অসংগতির কৌতুককর আবিষ্কার করা হয়।

ডিটেকটিভ বা রহস্য উপন্যাস :-

এই রহস্য মূলক উপন্যাসে অপরাধমূলক ঘটনা স্থান পায় এবং পুলিশী তৎপরতার মাধ্যমে কূটবুদ্ধির প্রখরতা প্রকাশ পায়।

উপন্যাসের প্রধান উপাদান কি কি :-

উপন্যাসের প্রধান উপাদান কি? একটি উপন্যাস তৈরীর ক্ষেত্রে প্রধান ৫টি উপাদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

১ - ঘটনা
২ - চরিত্র
৩ - সংলাপ
৪ - ভাষা এবং
৫ - ঔপন্যাসিকের জীবন দর্শন।

উপন্যাসের উপাদান - ঘটনা

উপন্যাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ঘটনা। উপন্যাসে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বলা যায়:

১. উপন্যাসের ঘটনা বলতে বুঝায় সময়ের সাথে সাথে পাত্রদের মাঝে যা ঘটে তাকে। এই ঘটনার মাধ্যমেই গল্পটি এগিয়ে যায়।

২. ঘটনা সাধারণত একাধিক। একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটনা ঘটে। এগুলোর মাঝে একটি সম্পর্ক বা সম্পর্কবিচ্ছিন্নতা থাকে।

৩. প্রধান ঘটনা থেকে অন্যান্য সহায়ক ঘটনা জন্ম নেয় এবং গল্পটি এগিয়ে যায়।

৪. গল্পের শুরুতেই এক বা একাধিক ঘটনা থেকে শুরু হয় যা আসল গল্পের প্রবেশ ঘটায়।

৫. ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমেই পাঠকের আগ্রহ ও উৎসাহ বজায় রাখা হয় এবং গল্পের উপর নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

তাই ঘটনা উপন্যাস লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

উপন্যাসের উপাদান - চরিত্র

উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো চরিত্র। চরিত্র সম্পর্কে বলা যেতে পারে:

১. উপন্যাসের চরিত্র বলতে বোঝায় উপন্যাসে যে ব্যক্তিগত পাত্রগুলো কাজ করে তাদের।

২. চরিত্র দুই ধরনের - প্রধান চরিত্র এবং দ্বিতীয়কথার চরিত্র।

৩. চরিত্রের মাধ্যমেই ঘটনাবলী তৈরি ও পরিচালিত হয়।

৪. চরিত্রগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক-বিরোধ থেকেই ঘটনা সৃষ্টি হয়।

৫. চরিত্রের মাধ্যমেই লেখক তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

সুতরাং, চরিত্র উপন্যাস গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপন্যাসের উপাদান - সংলাপ

উপন্যাসে সংলাপও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সম্পর্কে কিছু বিষয়:

১. সংলাপ বলতে চরিত্রগুলোর মধ্যে যে কথোপকথন হয় তাকে বোঝায়।

২. সংলাপের মাধ্যমেই পাত্রগুলোর মাঝে সম্পর্ক-বিরোধ তৈরি হয় এবং গল্পটি এগিয়ে যায়।

৩. সংলাপ দিয়ে লেখক তার বক্তব্য ও মতামত প্রকাশ করে থাকেন।

৪. পাত্রের চরিত্র ও মনোভাব তুলে ধরতে সংলাপই সর্বোত্তম মাধ্যম।

৫. উপন্যাসকে আরও স্বাভাবিক ও জীবন্ত করে তোলার জন্যও সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং সংলাপ অবশ্যই উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

উপন্যাসের উপাদান - ভাষা

উপন্যাসে ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে বলা যায়:

১. উপন্যাস লেখার জন্য সহজ ও আকর্ষণীয় ভাষাই সবচেয়ে উপযুক্ত।

২. চরিত্র এবং অবস্থার উপযুক্ত হওয়ার জন্য ভাষা নির্বাচন করতে হয়।

৩. শিল্পীর মতামত, বক্তব্য প্রকাশে ও বৈশিষ্ট্য তৈরিতে ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪. সহজ ও প্রবাহময় ভাষাই পাঠককে আকৃষ্ট করে।

৫. ভাষায় রস, তাত্পর্য, সংগতি লাভ করতে হবে যাতে গল্পটি স্বাভাবিক হয়।

অতএব, উপন্যাসে ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

উপন্যাসের উপাদান - ঔপন্যাসিকের জীবন দর্শন

উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে লেখক অথবা উপন্যাসিকের জীবনদর্শন। এ বিষয়ে কিছু মূল বিষয়:

১. লেখকের জীবনদর্শন এবং চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটে উপন্যাসে।

২. উপন্যাসিকের মতামত ও বক্তব্য তুলে ধরা হয় উপন্যাসের বিভিন্ন উপাদান যেমন চরিত্র, ঘটনা, সংলাপ এর মাধ্যমে।

৩. উপন্যাসে লেখকের সমাজ, নারী, ধর্ম, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে দর্শনও প্রকাশ পায়।

৪. একই লেখকের বিভিন্ন উপন্যাসে দর্শনের এক ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায়।

৫. লেখকের সাহিত্যকর্মের মূলে থাকে তাঁর জীবনদর্শন।

তাই উপন্যাসে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

উপন্যাস গঠনের কৌশল :-

উপন্যাস গঠনের কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বলা যায়:

১. প্রস্তুতি: শুরুতেই প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ এবং কাহিনীর খসড়া প্রস্তুতি করা।

২. প্লট তৈরি: গল্পের মূল ঘটনাসমূহ নির্ধারণ করে একটি প্লট গড়ে তোলা।

৩. পটভূমি সাজানো: ঘটনা সংঘটিত হবার পটভূমি সাজানো।

৪. চরিত্র গঠন: গল্পের চরিত্রসমূহকে গড়ে তুলতে হবে।

৫. ঘটনা বর্ণনা: ঘটনাবলী সাজাতে হবে যথাক্রমে।

৬. সংলাপ লিখন: চরিত্রদের মাঝে সংলাপ লেখা প্রয়োজন।

৭. সমাপ্তি: গল্পটির একটি যুক্তিসংগত সমাপ্তি দিতে হবে।

বিখ্যাত কিছু ঔপন্যাসিক ও তাঁর উপন্যাস রচনা :-


ভূদেব মুখোপাধ্যায় :-

বাংলা ইতিহাস নির্ভর উপন্যাসের ক্ষেত্রে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের একটি মূল্যবান স্থান আছে। ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ‘সফল স্বপ্ন' ও ‘অঙ্গুরীয় বিনিময়’ দুটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। 

সফল স্বপ্ন’ এর উৎস কন্টারের ‘The Traveler's Dream' এবং 'অঙ্গুরীয় বিনিময়' এর উৎস 'The Marhatta Chief' এই উপন্যাসে শিবাজীর কাহিনি ভারতীয়দের মনে জাতীয় চেতনা সঞ্চারে সহায়ক হয়েছে।

তাঁর অন্য দুটি উপন্যাস ‘পুষ্পাঞ্জলি’ ও ‘স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস'।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
সফল স্বপ্নএখানে
অঙ্গুরীয় বিনিময়এখানে
পুষ্পাঞ্জলি১৮৬৩এখানে
স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস১৮৯৫এখানে

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় :-

বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে উপন্যাসের শিল্প সমৃদ্ধ পূর্ণ প্রতিষ্ঠা। মৌলিক কল্পনা ও রচনাগুণের দ্বারা তিনি চোদ্দটি বিচিত্র উপন্যাস লিখেছিলেন।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
দুর্গেশনন্দিনী১৮৬৫এখানে
কপালকুণ্ডলা১৮৬৬এখানে
মৃণালিনী১৮৬৯এখানে
বিষবৃক্ষ১৮৭৩এখানে
ইন্দিরা১৮৭৩এখানে
যুগলাঙ্গুরীয়১৮৭৪এখানে
চন্দ্রশেখর১৮৭৫এখানে
রজনী১৮৭৭এখানে
কৃষ্ণকান্তের উইল১৮৭৮এখানে
রাজসিংহ১৮৮২এখানে
আনন্দমঠ১৮৮৪এখানে
দেবী চৌধুরাণী১৮৮৪এখানে



রাধারাণী১৮৮৬এখানে
সীতারাম১৮৮৭এখানে

'দুর্গেশনন্দিনীতে’ মুঘল ও পাঠানের সংগ্রামের বর্ণনা থাকলেও বিমলা, আয়েষা, তিলোত্তমা চরিত্রগুলি লেখকের কল্পনাপ্রসূত।

'কপালকুন্ডলা' উপন্যাসের কাহিনি সাগর সঙ্গমের অরণ্যভূমি থেকে সুদূর দিল্লী পর্যন্ত বিস্তৃত। সেখানে প্রকৃতি পালিতা নারীর সামাজিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ করা সম্ভব কিনা তাও উল্লেখযোগ্য।

মৃণালিনী’ উপন্যাসে মুসলমান বঙ্গবিজয়ের কাহিনি থাকলেও মৃণালিনীর প্রণয়কথা গুরুত্ব পেয়েছে।

রমেশ চন্দ্র :-

রমেশচন্দ্রের দুটি ঐতিহাসিক উপন্যাস –
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
মহারাষ্ট্র জীবন প্রভাত১৮৭৮এখানে
রাজপুত জীবনসন্ধ্যা১৮৮৯এখানে
এ ছাড়াও ইতিহাসমূলক ও রোমান্স উপন্যাস হলো
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
বঙ্গবিজেতা১৮৭৪এখানে
মাধবীকঙ্কণ১৮৭৭এখানে

স্বর্ণকুমারী দেবী :-

রবীন্দ্রনাথের অগ্রজা স্বর্ণকুমারী দেবীর 'দীপনির্বাণ' উপন্যাসে পৃথ্বীরাজ ও মহম্মদ ঘোরীর সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এবং 'কাহাকে' এটি একটি গার্হস্থ্য উপন্যাস। এ উপন্যাসে নায়িকার সূক্ষ্ম মনোবিশ্লেষণ বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতম অবদান।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
দীপনির্বাণ১৮৭৬এখানে
ছিন্নমুকুল১৮৭৯এখানে
বিদ্রোহ১৮৯০এখানে
ফুলের মালা১৮৯৫এখানে
কাহাকে১৮৯৮এখানে

তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় :-

তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় 'real ordinary life' এর চিত্র অঙ্কন করেছেন তাঁর 'স্বর্ণলতা' উপন্যাসে। এটি তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
স্বর্ণলতা১৮৭৪এখানে

প্রতাপচন্দ্র ঘোষ :-

প্রতাপচন্দ্র ঘোষ ‘বঙ্গাধিপ পরাজয়' নামে একটি সুবৃহৎ ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করেছিলেন। প্রতাপ আদিত্যের কাহিনির বিষয়।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
বঙ্গাধিপ পরাজয়১ম খণ্ড, ১৮৬৯
২য় খণ্ড ১৮৮৪
এখানে

শিবনাথ শাস্ত্রী :-

শিবনাথ শাস্ত্রীর উপন্যাসগুলির মধ্যে 'মেজবৌ', 'যুগান্তর', 'নয়নতারা' প্রভৃতির নাম করা যেতে পারে। এদের মধ্যে 'যুগান্তর' সামাজিক উপন্যাস ও বাকি দুটি পারিবারিক উপন্যাস হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
মেজবৌ১৮৮০এখানে
যুগান্তর১৮৯৫এখানে
নয়নতারা১৮৯৯এখানে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :-

১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাদম্বরী দেবীর প্রেরণায় রবীন্দ্রনাথ প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন 'করুণা'। বিষয় বৈচিত্র্যের পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্র-উপন্যাসগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যেতে পারে -

১ - ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস :- 
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
বউ ঠাকুরাণীর হাট১৮৮৩এখানে
রাজর্ষি১৮৮৭এখানে
বউ ঠাকুরাণীর হাট' উপন্যাসে ইতিহাসের অংশটি হল রাজা প্রতাপাদিত্যের কাহিনি। প্রস্তুতিকালীন অপরিণতির চিহ্ন এতে আছে।

'রাজর্ষি' উপন্যাসের কাহিনির উৎস ত্রিপুরার রাজবংশের ইতিহাস পটভূমিও ত্রিপুরা। কেন্দ্রীয় চরিত্র গোবিন্দমাণিক্য ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে বলিদান বন্ধ করে দেওয়ায় রাজা ও পুরোহিত রঘুপতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে। শেষে রঘুপতির পালিত পুত্র জয়সিংহের আত্মদানে এই বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। প্রথা ও সংস্কারের চেয়ে প্রেম-ভালোবাসার প্রভাব যে কত গভীর তা রঘুপতির হাহাকারে বর্ণিত।

রবীন্দ্রনাথের এই দুটি প্রথম উপন্যাস ঊনবিংশ শতকের বাংলা উপন্যাস ধারার অন্তর্ভুক্ত।

২ - সামজিক উপন্যাস :-
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
চোখের বালি১৯০৩এখানে
নৌকাডুবি১৯০৬এখানে
যোগাযোগ১৯২৯এখানে
ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি প্রতিভার বিশেষত্ব ধরা পড়েছে ‘চোখের বালি’তে। বিনোদিনী মহেন্দ্র-বিহারী-আশার পারস্পরিক আকর্ষণ-বিকর্ষণের টানে ‘আঁতের কথা' গড়ে উঠেছে। বিনোদিনীর তীক্ষ্ণ বাস্তববোধ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বাংলা উপন্যাসকে বিংশ শতকের আধুনিকতার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দিল।

'চোখের বালি'র পরবর্তী উপন্যাস ‘নৌকাডুবি’ প্লটের আকর্ষণই প্রধান। নায়ক রমেশ চরিত্রটি বিবর্ণ। একটা বিমূঢ় অসহায়তা তার চরিত্র বড় হয়ে উঠেছে।

‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘যোগাযোগ’ গ্রন্থবদ্ধ হয়। বনেদি অভিজাত সুশিক্ষায় মার্জিত দাদা বিপ্রদাসের স্নেহলালিত কুমুদিনী। বিয়ে হল স্থূল রুচিসর্বস্ব বিত্তবান মধুসূদনের সঙ্গে। পটভূমির বিশালতা ও শিল্পনৈপুণ্যের বিচারে ‘যোগাযোগ’ বাংলা উপন্যাসে এক নতুন সংযোজন।

৩ - স্বদেশ চেতনামূলক উপন্যাস :-
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
গোরা১৯১০এখানে
ঘরে বাইরে১৯১৬এখানে
চার অধ্যায়১৯৩৪এখানে
গোরা' উপন্যাসে স্বদেশচেতনার সর্বোত্তম প্রকাশ ঘটেছে। উপন্যাসের পটভূমি কলকাতা মহানগরী। স্বদেশের স্বরূপ জানবার জন্য গোরা আগ্রহী ছিল। প্রথমে সে ছিল নিষ্ঠাবান হিন্দু। পরে সে জানতে পারে, সে জাতে আইরিশ। কৃষ্ণদয়াল ও আনন্দময়ীর পালিত পুত্র। জন্মরহস্য জেনে ‘গোরা’ পৌঁছেছে জাতিভেদমুক্ত স্বদেশচেতনায়।

রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ জিজ্ঞাসার ভিন্নতর রূপ মূর্ত হয়েছে 'ঘরে বাইরে' এবং 'চার অধ্যায়ে'। আন্দোলনের নামে জাতীয় উন্মাদনার মত্ততার চিত্ররূপ 'ঘরে বাইরে'। সন্দীপ চরিত্র গোটা রবীন্দ্রসাহিত্যে বিস্ময়কর সৃষ্টি।

'চার অধ্যায়' উপন্যাসে সন্ত্রাসবাদে অনাস্থা, মনুষ্যত্বকে বেশি মূল্য দেওয়া ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধতা লক্ষণীয়।

৪ - রোমান্টিক উপন্যাস :-
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
চতুরঙ্গ১৯১৬এখানে
শেষের কবিতা১৯২৯এখানে
দুই বোন১৯৩৩এখানে
মালঞ্চ১৯৩৪এখানে
রবীন্দ্রনাথের সমস্ত উপন্যাসই কবির কলমে লেখা। তবু 'চতুরঙ্গ' ও 'শেষের কবিতা' এ ব্যাপারে অনন্য। 'চতুরঙ্গ' অখণ্ড জীবনরূপের চারটি অঙ্গের কাহিনি'। এই চারটি অঙ্গ-জ্যাঠামশায়- শচীশ দামিনী-শ্রীবিলাস। এরা প্রত্যেকে অন্তর্মগ্ন ভাষায় নিজের মনোবিশ্লেষণ করেছে। এ উপন্যাসে চরিত্রগুলির জীবনসত্য অন্বেষণের প্রচেষ্টা এক নতুন আঙ্গিকে দেখা দিয়েছে।

'শেষের কবিতা' উপন্যাসটি প্রাণপ্রাচুর্যে উচ্ছল, জীবনরসে উদীপ্ত, বুদ্ধিবাদের উজ্জ্বলতায় অনন্য। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র অমিত যেন এক অনর্গল বেজে চলা জীবনসঙ্গীত। অমিত কেতকী, লাবণ্য-শোভনলালের চতুর্ভুজ সম্পর্ক প্রেমমূলক উপন্যাস রচনায় তাঁর অদ্বিতীয় ক্ষমতার প্রমাণ।

'দুই বোন' উপন্যাসের দুই প্রান্তে রয়েছে শর্মিলা ও ঊর্মিমালা। শশাঙ্কের জীবনকে কেন্দ্র করে তার ছায়াবিস্তার। নারীর শ্রেয়সী রূপ প্রেয়সী রূপের তুলনায় প্রধান এরূপ একটি বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা আছে।

'মালঞ্চ' উপন্যাসের সমস্যাকে উল্টেভাবে দেখানো হয়েছে। এখানে নায়ক আদিত্যকে কেন্দ্র করে নীরজা ও সরলার প্রণয়-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কাহিনির শেষে নীরজার বেদনা প্রেমের মালঞ্চে ট্যাজেডির দীর্ঘশ্বাসকে ঘনীভূত করেছে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় :-

শরৎচন্দ্র বাঙালি উপন্যাসিকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন। আবেগের বাড়াবাড়ি, পল্লীজীবনের দুঃখ-বেদনা, সমস্যা-সংকট তাঁর উপন্যাসের মূল ভিত্তি।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
বড়দিদি১৯১৩এখানে
বিরাজ বৌ১৯১৪এখানে
বিন্দুর ছেলে১৯১৪এখানে
পরিণীতা১৯১৪এখানে
পণ্ডিতমশাই১৯১৪এখানে
মেজদিদি১৯১৫এখানে
পল্লীসমাজ১৯১৬এখানে
বৈকুণ্ঠের 'উইল১৯১৬এখানে
চন্দ্রনাথ১৯১৬এখানে
অরক্ষণীয়া১৯১৬এখানে
নিষ্কৃতি১৯১৭এখানে
শ্রীকান্ত১৯১৭এখানে
চরিত্রহীন১৯১৮এখানে
গৃহদাহ১৯২০এখানে
দেনাপাওনা১৯১৩এখানে
বামুনের মেয়ে১৯২০এখানে
নববিধান১৯২৪এখানে
পথের দাবী১৯২৬এখানে
শেষ প্রশ্ন১৯৩১এখানে
বিপ্রদাস১৯৩৫এখানে
শেষের পরিচয়১৯৩৯এখানে

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় :-

বিভূতিভূষণ কল্লোল গোষ্ঠীর লেখক হয়েও বাংলার অস্থির সমাজ পরিবেশে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। বৈচিত্র্যে ও সংখ্যাধিক্যে বিভূতিভূষণের রচনাসমূহ বিস্ময় জাগায়। তিনি ছিলেন জীবনের উপভোক্তা। তাঁর রচনা সমূহ হলো-
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
পথের পাঁচালী১৯২৯এখানে
অপরাজিত১৯৩২এখানে
দৃষ্টিপ্রদীপ১৯৩৫এখানে
আরণ্যক১৯৩৯এখানে
আদর্শ হিন্দু হোটেল১৯৪০এখানে
বিপিনের সংসার১৯৪১এখানে
দুই বাড়ী১৯৪১এখানে
অনুবর্তন১৯৪২এখানে
দেবযান১৯৪৪এখানে
কেদার রাজা১৯৪৫এখানে
অথৈ জল১৯৪৭এখানে
ইছামতী১৯৫০এখানে
দম্পতি১৯৫২এখানে
অশনি-সঙ্কেত১৯৫৯এখানে
'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে অপু-দুর্গার শৈশব কৈশোরের কাহিনি গড়ে উঠেছে।

অপরাজিত’ উপন্যাসে অপুর কলকাতাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে জীবনযাপন, অপর্ণার সঙ্গে বিবাহ ও স্ত্রীর মৃত্যু। শেষে পুত্র কাজলকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসা।

'আরণ্যক' উপন্যাসে নায়ক সত্যচরণ বাংলা ও বিহারের সীমানায় জমি বিলির কাজ নেয় ও অরণ্যের সৌন্দর্যের স্মৃতিচারণা করে।

আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসে রাধুনি বামুন হাজারী ঠাকুরকে নিয়ে রচিত।

ইছামতী' উপন্যাসে ইছামতী নদীর দুই তীরের মানুষজন ও নীলকুঠি সংক্রান্ত নানা ঘটনা।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় :-

সমাপ্তি ও সূচনার যুগসন্ধিতে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। তাঁর সাহিত্যচর্চার কাল ১৯২৬-১৯৭১ খ্রিঃ পর্যন্ত বিস্তৃত। তারাশঙ্করের উপন্যাসের তিনটি লক্ষণীয় ধারা দেখা যায়


প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ ১৯২৮-৩১ পর্যন্ত কারাবাস করেছেন আইন অমান্য আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরূপে। এটাই তাঁর প্রস্তুতির সময়।

১৯২৭-১৯৩৯ এই পর্বে রচিত তাঁর উপন্যাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘পাষাণপুরী’, ‘নীলকণ্ঠ’, ‘রাইকমল’, ‘আগুন’।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
চৈতালী ঘূর্ণি১৯২৮এখানে
পাষাণপুরী১৯৩৩এখানে
নীলকণ্ঠ১৩৪০এখানে
রাইকমল১৩৪২এখানে
আগুন১৯৩৭এখানে
এর পরেই ১৯৩৯-১৯৫০ এই পর্বে রচিত ‘ধাত্রীদেবতা', ‘কালিন্দী', ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্চগ্রাম’ এখানে সমাজ রূপান্তরের ভাবনা সুস্পষ্ট।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
ধাত্রীদেবতা১৯৩৯এখানে
কালিন্দী১৯৪০এখানে
গণদেবতা১৯৪২এখানে
পঞ্চগ্রাম১৯৪৪এখানে
'ধাত্রীদেবতা' র নায়ক শিবনাথ জমিদার সন্তান হলেও মায়ের দেশপ্রেম ও বিপ্লবী নেতার উপদেশে ব্রাত্যজনের উন্নয়নের ব্রত নেয়। 

'কালিন্দী’ তে দেখা যায় জমিদার সন্তান 'অহীন্দ্র' মার্কসীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত।

অন্যদিকে ‘গণদেবতা’য় ভাঙনের চিত্র, 'পঞ্চগ্রাম' উপন্যাসে আছে আইন অমান্য আন্দোলনের উত্তেজনা। নায়ক দেবু ঘোষের কারাবাস ও শেষে শোষণহীন সমাজের স্বপ্ন।

১৯৫০ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তারাশঙ্করের উপন্যাসের তৃতীয় পর্ব। এই পর্বে আছে 'হাঁসুলী বাঁকের উপকথা', 'আরোগ্য নিকেতন', 'উত্তরায়ণ', 'সপ্তপদী', 'মহাশ্বেতা, ‘যোগভ্রষ্ট', 'মঞ্জুরী অপেরা', 'মহানগরী'।

উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
হাঁসুলী বাঁকের উপকথা১৯৫১এখানে
আরোগ্য নিকেতন১৯৫৩এখানে
উত্তরায়ণ১৯৫০এখানে
সপ্তপদী১৯৬৪এখানে
মহাশ্বেতা১৯৬০এখানে
যোগভ্রষ্ট১৯৬৭এখানে
মঞ্জুরী অপেরা১৯৭১এখানে
মহানগরী১৯৭৫এখানে
রাঢ় অঞ্চলের বন্য প্রকৃতি আর জীবনোল্লাস মূর্ত 'হাঁসুলী বাঁকের উপকথা'র মধ্যে। 'সপ্তপদী' তে আছে প্রেম ও সত্যসন্ধানের সমন্বয়। তারাশঙ্করের মৃত্যু দর্শনের এক আশ্চর্য পরিচয় 'আরোগ্য নিকেতন' উপন্যাসটি। অনেকের মতে এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় :-

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের প্রধান ও শক্তিশালী ঔপন্যাসিক। বিশ বছরের সাহিত্যজীবনে তিনি লিখেছিলেন পঁয়ত্রিশটি উপন্যাস ও নানা গল্পগ্রন্থ। মানিকের উপন্যাস অবয়বে আছে বিজ্ঞানচেতনা, অন্তর্মনের জটিলতা অনুসন্ধান, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের চেতন-অচেতনের প্রভাব ও মার্কসীয় ভাবনার অনুসন্ধান।
উপন্যাসপ্রকাশিতpdf
জননী১৯৩৫এখানে
দিবারাত্রির কাব্য১৯৩৫এখানে
পুতুল নাচের ইতিকথা১৯৩৬এখানে
পদ্মা নদীর মাঝি১৯৩৬এখানে
জীবনের জটিলতা১৯৩৬এখানে
অমৃতস্য পুত্রা১৯৩৮এখানে
শহরতলী১৯৪০এখানে
অহিংসা১৯৪১এখানে
প্রতিবিম্ব১৯৪৩এখানে
সহর বাসের ইতিকথা১৯৪৬এখানে
চিহ্ন১৯৪৭এখানে
চতুষ্কোণ১৯৪৮এখানে
স্বাধীনতার স্বাদ১৯৫১এখানে
আরোগ্য১৯৫৩এখানে
মানিকের প্রথম উপন্যাস 'জননী'। এখানে শ্যামা নামের এক নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীর জননীরূপ আত্মপ্রকাশের চিত্রটি মূর্ত।

দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটির গঠনশৈলী অভিনব। এখানে ‘দিনের কবিতা’, ‘রাতের কবিতা’ ও দিবা ‘রাত্রির কাব্য' এই তিনটি অধ্যায়ে উপন্যাসটি সম্পূর্ণ।

'পুতুল নাচের ইতিকথা' ও ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ একই সময়পর্বে লেখা। ‘পুতুল নাচের ইতিকথা'য় গাওদিয়ার গ্রাম্য পরিবেশ বহুবিধ দ্বন্দ্বের টানাপোড়েনে ডাক্তার শশী-কুসুম-কুমু, গোপাল প্রমুখ মানুষের মনোরূপের প্রতিফলন। পদ্মার নিকটবর্তী অঞ্চলের পটে দরিদ্র-লাঞ্ছিত গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনচিত্র দেখা যায় ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ তে।

মধ্যবিত্ত এক বেকার যুবকের যন্ত্রণাময় চিত্র ‘জীবনের জটিলতা' য়।

সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির লাভ স্বার্থ ও আদর্শচ্যুতির নিষ্ঠুর বাঙ্গাত্মক চিত্র ‘অমৃতস্য পুত্রা’, নৈরাশাময় নেতিবাচক মনোভঙ্গি থেকে উত্তরণ দেখা যায় 'সহরতলী' উপন্যাসে।

'অহিংসা' উপন্যাসে সদানন্দ মহেশ চৌধুরী বিপিনের বিরোধের কারণ মাধবীলতা।

'প্রতিবিম্ব' উপন্যাসে ভারতের পাটিকর্মী হওয়ার সদিচ্ছা সত্ত্বেও কৃষক-মজুরদের সঙ্গে অনৈক্যের পরিচয় প্রতিফলিত।

'সহরবাসের ইতিকথা' য় শহর সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা, শহর ও গ্রামের পারস্পরিক চিত্র প্রতিফলিত।

১৯৪৬ সালের কলকাতায় রসিদ আলি দিবস উপলক্ষে ওয়েলিংটন স্কোয়ারে ছাত্র যুবকদের বিক্ষোভ নিয়ে লেখা 'চিহ্ন'। 'চিহ্ন' উপন্যাসের পটভূমি একটি রাজনৈতিক উপন্যাস।

মানিকের উপন্যাসে ফ্রয়েডীয় মনোবিকলনের সর্বোত্তম প্রকাশ 'চতুষ্কোণ' উপন্যাসে।

'স্বাধীনতার স্বাদ' ও 'আরোগ্য' উপন্যাসে কেশব ড্রাইভার নিজের পরিবারে ও অন্যত্র তার মানসিক রোগের কারণ ও চিকিৎসার পথ খুঁজে হয়রান হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Please do not enter any spam link in the comment box.