কবিতা কি বা কাকে বলে? কবিতার প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য

খুব সহজেই অনুমান করা যায় কবির বেদনাবিদ্ধ হৃদয়ই কবিতার জন্মভূমি। বাইরের জগতের রূপ-রস, স্পর্শ-শব্দ বা আপন মনের ভাবনা-বেদনা, অনুভূতি কল্পনাকে যিনি অনুভূতিস্নিগ্ধ ছন্দোময় শিল্পরূপ দিতে পারেন তিনিই কবি।

বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে কোনো একটি সূত্রকে অবলম্বন করে কবির আনন্দ বেদনা যখন প্রকাশের পথ পায় তখনই জন্ম হয় কবিতার।

বস্তুত মানব মনের ভাবনা কল্পনা যখন অনুভূতির রঙে রঞ্জিত হয়ে যথাযথ শব্দসম্ভারে বাস্তব, সুষমামণ্ডিত, চিত্রাত্মক ও ছন্দোময় রূপ লাভ করে তখনই তা হয়ে ওঠে কবিতা। তাহলে এখন প্রশ্ন আসে কবিতা কি?

আরও পড়ুন :- গীতিকা কাকে বলে?

এককথায়, ছন্দোবদ্ধ পদকেই কবিতা বলা যায়। ছন্দই কবিতার প্রাণ, ছন্দই কবিতাকে তার স্বরূপগত বৈশিষ্ট্যে উন্নীত হতে সাহায্য করে।

কিন্তু কেবল ছন্দই কবিতার সব ও শেষ কথা নয়। কবিতার অপরিহার্য অঙ্গ তার অলংকার। কবিতার মধ্যে কবির কল্পনাশক্তির প্রকাশ, অনুভূতির উচ্ছ্বাস বাণীমূর্তিতে ধরা পড়ে।

চর্যাপদ বাংলা কাব্য সাহিত্যের আদি নিদর্শন। এর কবিতাগুলোতে শুধু ধর্মের কথাই নয়, আছে ভালো কবিতার স্বাদ; আছে সেকালের বাংলার সমাজছবি। ছবিগুলো এতো জীবন্ত যে, মনে হয় এই মাত্র প্রাচীন বাংলার গাছপালা, আর সাধারণ মানুষের মধ্যে একটু হেটে এলাম।

এছাড়াও চর্যাপদে আছে অসহায় মানুষের বেদনার কথা; রয়েছে সুখের উল্লাস। আছে চমৎকার ছন্দোবদ্ধ পদ এবং অলংকারের ব্যবহার।
কবিতা কি বা কাকে বলে

কবিতা কি বা কাকে বলে :-

কবিতার সংজ্ঞায় ST Coleridge বলেন,

Best words in best order. অর্থাৎ

অপরিহার্য শব্দের অবশ্যম্ভাবী বাণী বিন্যাসকে কবিতা বলা যায়।

নানাভাবে মনের ভাব কল্পনা যখন অনুভূতিরঞ্জিত, যথাবিহীত শব্দসম্ভারে বাস্তব সুষমামণ্ডিত ছন্দময়রূপ লাভ করে তখন তা কবিতা হয়ে ওঠে।

ওয়ার্ডসওয়ার্থ কবিতা কাকে বলে এসম্পর্কে বলেছেন -

Poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings; অর্থাৎ কবিতা দুর্নিবার আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ।

কবিতা কি? Shelley এর মতে -

Poetry in the general sense may be defined as the expression of the imagination.

কল্পনাকে প্রকাশ করার নামই কবিতা। সাধারণভাবে কবিতা বলতে ছন্দোবন্ধ পদকে বুঝি। আর বৃহৎ অর্থে রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-

‘নিজের প্রাণের মধ্যে, পরের প্রাণের মধ্যে ও প্রকৃতির মধ্যে প্রবেশ করিবার ক্ষমতাকেই বলি কবিত্ব।'

আরও পড়ুন :- ব্রত কথা কি?

কবিতার প্রকারভেদ :-

কবিতাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন -

মন্ময় কবিতা এবং
তন্ময় কবিতা

মন্ময় কবিতা কি বা কাকে বলে :-

অলংকার শাস্ত্রে কবিকে প্রজাপতি ব্রহ্মার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। প্রজাপতি ব্রহ্মা যেমন বিশ্বজগৎকে আপন কল্পনা দিয়ে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি কবিগণ শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে এক বিচিত্র মায়ার জগৎ সৃষ্টি করেন।

কবি যখন একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ভাবনা, চিন্তা তার কাব্যে সামগ্রিক রূপে গ্রহণ করে আত্মপ্রকাশ করেন তখন সেই অমর সৃষ্টিকে মন্ময় কবিতা বলে।

মন্ময় কবিতা ব্যক্তিনিষ্ঠ। কবির অন্তরের অনুভূতির দিকগুলো মন্ময় কবিতায় ধরা পড়ে। কাব্যতত্ত্ব, সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা এবং রস সৌন্দর্যের বিচারে মন্ময় কবিতাই শ্রেষ্ঠ।

মন্ময় কবিতার শ্রেনীবিভাগ :-

মন্ময় কবিতা প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

গীতি কবিতা ও
সনেট।

তন্ময় কবিতা কাকে বলে :-

আধুনিক গীতি কবিতার অন্যতম কবিতারূপ তন্ময় কবিতা।

জগৎ-সংসার বা বস্তুবিশ্বের কোনো বিষয় যখন কবি হৃদয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে কবির অনুভূতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করে তখনই বিষয়গত গীতিকবিতার সৃষ্টি।


তন্ময় কবিতায় বস্তুসত্তাই প্রধান। আলংকারিক ভাষার নৈপুণ্য, ছন্দের জাদুকরী বৈচিত্র্য, ভাবের ব্যঞ্ছনা ও কল্পনার চমৎকারিত্বই হলো তন্ময় কবিতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

কবিতার বৈশিষ্ট্য :-

জীবনবোধ ও শৈলিমুখরতা- এই দুটি প্রভায়ের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দিকের যথাযথ উপস্থাপনই কবিতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এই পরিপ্রেক্ষিতে কবিতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত নিম্নরূপ সিদ্ধান্তসমূহও বিবেচ্য-

১ - কবিতায় জীবনবোধের সুতীব্র প্রকাশ লক্ষ করা যায়।

২ - আঙ্গিক ও প্রকরণ নিয়ে কবিদের নিত্য-নতুন ভাবনা কবিতায় দৃশ্যমান থাকে। কবিদের এই প্রচেষ্টাই কবিতাকে ক্রমউৎকৃষ্টতা দান করে।

৩ - কবিতায় অবচেতনের চেতন প্রয়োগ প্রাধান্য পায়। অর্থাৎ কবিমনের অবচেতন অংশে প্রাধান্যবিস্তারকারী চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছাগুলো শোভন রূপে কবিতায় প্রকাশ করা হয়।

৪ - কখনও কখনও কবিতায় গভীরতাশ্রয়ী ভাব লক্ষ করা যায়। তখন শব্দের সুনির্দিষ্ট অর্থসীমা অতিক্রম করে কবিতা প্লিজমসদৃশ হয়ে ওঠে। পাঠকের কাছে তখন একই কবিতায় ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য ধরা পরে।

৫ - কবিতা অলংকৃত। অষ্টপ্রহরই সে সুসজ্জিত থাকে। বিভিন্ন প্রকার হদ, অলংকার, ধ্বনিব্যন্দ্রনা, ভাব, রস কবিতাকে সমৃদ্ধ ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে রাখে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ