পণ্য বিনিময় কী বা কাকে বলে? পণ্য বিনিময় কত প্রকার ও কি কি?

পণ্য বিনিময় কাকে বলে :- 

মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্যদ্রব্য উৎপাদনকারীর কাছ থেকে ক্রয় করে ভোগকাররি নিকট বিক্রয় করার কার্যই হচ্ছে ট্রেড বা পণ্য বিনিময়। পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় উৎপাদনকারী ও ভোক্তার মধ্যে সেতুন্ধনের সৃষ্টি হয়।

প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উৎপাদকের নিকট থেকে ভোক্তার দূরত্ব এতো বেশি থেকে যে উভয়ের পক্ষে পরস্পর মিলিত হয়ে পণ্যদ্রব্য জন্য বিক্রয় করা সম্ভব হয় না। উৎপাদক ও ভোক্তার এ দ্বিবিধ অসুবিধা নিরসনকল্পে যে বাণিজ্যিক ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে তাকেই ট্রেড বা পণ্য বিনিময় বলে।

পণ্য বিনিময় বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে বাণিজ্যের ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে এবং পণ্য লেনদেনের মাধ্যমে পুরো ব্যবসায় ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে।

নিম্নে ট্রেড বা পণ্য বিনিময় সম্পর্কে তিনটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো।

Dictionary of Trade and Commerce অনুযায়ী "ট্রেড বা পণ্য বিনিময় হলো ব্যবসায় কার্যক্রমের মূল বিষয় যার সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় জড়িত। এটি বিক্রেতার নিকট থেকে ক্রেতার নিকট পণ্য বা সেবার হস্তাভাবে সাহায্য করে"

পণ্য এবং পরিষেবা ক্রয়। এটা থেকে পণ্য ও সেবা স্থানান্তর সহজতর হয়।

আরও পড়ুন:- আমদানি কাকে বলে?

শংকর প্রসাদ গুহ এর ভাষ্যমতে পণ্য বিনিময় কী? তার হলো -

“ট্রেড এর অর্থ হলো উৎপন্ন পণ্য সামগ্রীর জন্য বিক্রয়। উৎপাদানকারী ও সম্ভোগকারীর মধ্যে ব্যক্তিগত বাধ অপসারণ করে উভয়ের সংযোগ হলো ট্রেড।"

পণ্য বিনিময় কাকে বলে? P.H. Collin- বলেন, “পণ্য বিনিময় হলো ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসায়"

উল্লেখিত সংজ্ঞা সমূহের আলোকে আমরা পণ্য বিনিময় কী বা কাকে বলে? তা বলতে পারি, শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বা সেবাসামগ্রী উৎপাদকের কাছ থেকে চূড়ান্ত ভোক্তার নিকট প্রেরণের লক্ষ্যে যে সব ব্যক্তিগত বাধার সম্মুখীন হতে হয় তা দূরীকরণার্থে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয় কার্যকে ট্রেড বা পণ্য বিনিময় বলে।
পণ্য বিনিময় কী

পণ্য বিনিময় কত প্রকার ও কি কি :-

পণ্য বিনিময় প্রধানত: দুপ্রকার

১. অভ্যন্তরীণ পণ্য বিনিময়।
২. বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক পণ্য বিনিময়

১. অভ্যন্তরীণ পণ্য বিনিময় (Home trade) :-

একই দেশের সীমানার ভেতরে থেকে যে সব ব্যবসায়িক কার্য পরিচালিত হয় তাকে অভ্যন্তরীণ পণ্য বিনিময় বলে। অভ্যন্তরীণ পণ্য বিনিময়কে দুশ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়

ক. পাইকারি ব্যবসায় (Wholesale business) :-

উৎপাদকের নিকট থেকে বেশি পরিমাণে পণ্য খরিদ করার পর সেই পণ্য আবার ভোক্তার নিকট বিক্রয় না করে শুধু খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট অল্প অল্প পরিমাণে বিক্রয় করা হলে এরূপ কার্যক্রমকে পাইকারি ব্যবসায় বলে।

খ. খুচরা ব্যবসায় (Retail business) :-

ভোক্তাদের নিকট চাহিদা মোতাবেক সরাসরি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করাকে খুচরা ব্যবসায় বলে।

আরও পড়ুন:- একমালিকানা ব্যবসায় কাকে বলে?

২. বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক পণ্য বিনিময় (Foreign trade) :-

বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্যদ্রব্যের লেনদেনকে বৈদেশিক পণ্য বিনিময় বলে।

অন্যভাবে বললে, নিজ দেশ থেকে অন্যদেশে কোন দ্রব্য বিক্রয় করা হলে কিংবা ভিনদেশ থেকে অন্যকোনো দ্রব্য নিজ দেশে কিনে আনা হলে তাকে বৈদেশিক পণ্য বিনিময় বলা হয়।

বৈদেশিক পণ্য বিনিময়কে তিন রোণিতে বিভক্ত করা যায়।

ক. আমদানি বাণিজ্য (Import trade) :-

বিদেশ থেকে পণ্য দ্রব্য ক্রয় করা হলে তাকে আমদানি বাণিজ্য বলে।

খ. রপ্তানি বাণিজ্য (Export trade) :-

নিজ দেশ থেকে বিদেশে পণ্য দ্রব্য বিক্রয় করা হলে তাকে রপ্তানি বাণিজ্য বলা হয়।

গ. পুনঃ রপ্তানি বাণিজ্য (Re-export trade) :-

পণ্য দ্রব্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করার পর তা ভিন্ন কোনো দেশে রপ্তানি করা হলে তাকে পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য বলে।

পণ্য বিনিময়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :-

যে কোনো দেশের অর্থনীতিতে পণ্য বিনিময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। পণ্য বিনিময়ের প্রসারের ফলেই উৎপাদন কার্য ত্বরান্বিত হয় এবং বণ্টন কার্যে গতিশীলতার সৃষ্টি হয়। নিম্নের আলোচনায় পণ্য বিনিময়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলো।

উৎপাদনে সহায়তা (Assisting in Production) :-

পণ্য বিনিময়ের কারণে উৎপাদক নির্বিঘ্নে উৎপাদন কার্য চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কেননা ব্যবসায়ীরা উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করার দায়িত্ব বহন করে এবং উৎপাদক বিক্রয়ের ঝামেলা থেকে রেহাই পায়। এভাবে পণ্য বিনিময় সারাসরি উৎপাদন কার্যে সহায়তা করছে।

পণ্য বিতরণে গতিময়তা (Dynamism in distribution of products) :-

ট্রেড বা পণ্য বিনিময় কর্ম প্রচেষ্টার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারকারী ভোক্তার নিকট বণ্টন করা সম্ভবপর হয়। পন্য বিনিময়ের প্রচলন না হলে পণ্য বণ্টনে যে জটিলতার সৃষ্টি হতো তার কবলে পড়ে দেশের গোটা অর্থনীতি হুমড়ি খেয়ে পড়তে বাধ্য হতো।

আরও পড়ুন:- অংশীদারি ব্যবসায় কাকে বলে?  

চাহিদা পূরণ (Fulfillment of demand) :-

পণ্য বিনিময় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রয়োজনে পণ্যসামগ্রী দ্রুত ভোগের উপযোগী করে তুলতে সহায়তা করে। ভোগের আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত হওয়ায় জনগণের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আসে যা জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সহায়ক।

ঘাটতি পূরণ (Fulfillment of shortage) :-

দেশের এক অঞ্চলে কোনো পণ্যের ঘাটতি দেখা দিলে পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে সেখানে দ্রুত পণ্য প্রেরণ করা সম্ভব হয়। ফলে ঘাটতি দূরীভূত হয় এবং ঘাটতি অঞ্চলে পণ্যের আকাল পড়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এতে আঞ্চলিক ভারসাম্যও রক্ষা পায়। বর্তমান যুগে আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষায় পণ্য বিনিময়ের অবদান অনস্বীকার্য।

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি (Creating employment opportunity) :-

পণ্য বিনিময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অসংখ্য লোকের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েও যথেষ্ট অবদান রাখছে। এটি হাজার হাজার লোকের জীবিকার উৎস হিসেবে কাজ করে। ফলে তাদের আয় এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ