নগদান বই কাকে বলে? নগদান বইয়ের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা লিখ?

নগদান বই কাকে বলে :-

ছোট্ট বড় সব ধরণের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন নগদ এবং ধারে উত্তয় প্রকার লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের আকার বড় হলে এ লেনদেনের সংখ্যা হয় প্রচুর যা শুধু একটি মাত্র জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। তাই সর্বপ্রকার নগন লেনদেনসমূহকে একত্রিত করে যে হিসাবের বই প্রস্তুত করা হয় তাকে নগদান বই বলা হয়।

ব্যাপকভাবে নগন ও ব্যাংকসংক্রান্ত লেনদেনসমূহ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে তারিখের ক্রমানুযায়ী দুতরফা দাখিলা নীতি অনুসরণ করে পর্যায়ক্রমে যে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাই নগদান বই।

এই বই থেকে নির্দিষ্ট সময় শেষে জের টেনে নগদ তহবিল ও ব্যাংক জমা টাকার পরিমাণ জানা যায়। নগদান বইয়ের দুটি পার্শ্ব থাকে যার ডেবিট পার্শ্বে অর্থাৎ বামদিকে নগদ প্রাপ্তিসমূহ এবং ক্রেডিট পার্শ্বে অর্থাৎ ডানদিকে নগদ প্রদান সমূহ লেখা হয়।

নাদান নগদান বই সম্পর্কে কয়েকজন লেখকের সংজ্ঞা দেওয়া হলো।

প্রখ্যাত লেখক এল সি জুপারের মতে, “নগদান বই হচ্ছে এমন একটি বই যাতে একজন ব্যক্তি কর্তৃক প্রাপ্ত ও প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ লিখে অথবা লিপিবদ্ধ করে।"

অধ্যাপক চেম্বার-এর মতে, “নগদান বই হচ্ছে এমন একটি বই যাতে টাকা পয়সার প্রাপ্তি এবং প্রদানের হিসাব রাখা হয়।"

পরিশেষে বলা যায়, যে বইতে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নগদ, ঢেক সমূহের প্রাপ্তি প্রদানসমূহ তারিখের ক্রমানুসারে প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে নগদান বই বলে।


নগদান বইয়ের প্রকৃতি :-

যে বইতে নগদ আদান-প্রদান বা প্রাপ্তি-পরিশোধ সংক্রাশ লেনদেন পর্যায়ক্রমে তারিখের ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয় তাকে নগদান বই বলে। নগদান বই একাধারে জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ের সুবিধাই প্রদান করে বিধায় একে জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ই বলা হয়।

নগদান বইকে জাবেদা বলার কারণ :-

১. নগদান বই জাবেদার ন্যায় প্রাথমিক বই। এতে প্রতিটি লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগদান বইতে লেখা হয়।

২. জাবেদার মতই প্রতিটি লেনদেনকে তারিখ অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়।

৩. জাবেদার মতই নগদান বইতে প্রতিটি লেনদেনের বিবরণ বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

৪. জাবেদার ন্যায় প্রতিটি লেনদেনসমূহকে খতিয়ান হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

৫. জাবেদার ন্যায় নগদান বইতেও পৃষ্ঠা নম্বর থাকে।

নগদান বইকে খতিয়ান বলার কারণ :-

১. নগদান বই ও খতিয়ান বই তৈরির ছক একই রকম।

২. এটি খতিয়ানের হিসাবের মতই পাকা বই।

৩. খতিয়ানের মতই নগদান বইয়ের উদ্বৃত্ত নির্ণয় করে রেওয়ামিলে স্থানান্তর করা হয়।

৪. নগদান বইতে খতিয়ানের অনুরূপ প্রারম্ভিক ও সমাপনী উদ্বৃত্ত থাকে।

৫. নির্দিষ্ট সময় পর নগদান বইয়ের উদ্বৃত খতিয়ান হিসাবের মত তৈরি করা হয়।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে নগদান বই জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ের কাজ করে।
নগদান বই কাকে বলে

নগদান বইয়ের বৈশিষ্ট্য :-

স্বাভাবিকভাবে নগদান বইকে জাবেদা ও খতিয়ানের অংশ মনে হলেও এ হিসাবটি স্বতন্ত্র। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ ও ব্যাংক জমার পরিমাণ জানা যায়। নিম্নে নগদান বইয়ের কতিপয় বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে -

১. বিশেষ জাবেদা :

এতে শুধুমাত্র নগদ লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয় বলে একে বিশেষ জাবেদা বলা যায়।

২. দুটি পার্শ্ব :

নগদান বইয়ের বাম পার্শ্বে অর্থাৎ ডেবিট দিকে সকল প্রকার নগদ ও চেক প্রাপ্তি এবং ডান পার্শ্বে অর্থাৎ‌ক্রেডিট দিকে সকল প্রকার নগন ও চেক প্রদান লিখা হয়।

৩. জাবেদা ও খতিয়ান :

নগদান বই জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ের কাজ করে। কারণ নানান বইতে লেনদেনসমূহকে ব্যাখ্যাসহ প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। আবার পাকাপাকিভাবে নগদান বইতে লিখে নির্দিষ্ট সময়াড়ে জোর টানা হয়।

৪. ডেবিট উদ্বৃত্ত :

নগদ প্রাপ্তির চেয়ে নগদ প্রদান বেশি হতে পারে না বিধায় নগদান বইতে সব সময় ডেবিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে।

৫. নগদ উদ্বৃত্ত :

নগদান বই হতে নির্দিষ্ট সময়ান্তে হাতে নগদ উদ্বৃত্তের পরিমাণ জানা যায় তবে নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান সমান হলে কোন উদ্বৃত্ত হয় না।

৬. ধারে লেনদেন :

কোন প্রকার ধারে লেনদেন নগদান বইতে লিপিবন্ধ হয় না।

৭. ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধকরণ :

তারিখের ক্রমানুসারে সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান লিপিবন্ধ করা হয়।

৮. উদ্বৃত্ত স্থানান্তর :

নগদান বইয়ের উদ্বৃত্ত সরাসরি রেওয়ামিল স্থানান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন :- লেনদেন কাকে বলে?

নগদান বইয়ের সুবিধা :-

নগদান বইয়ের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ ও ব্যাংক জমার পরিমাণ সহজেই জানা যায়। এই বই সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। নিচে সেই সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো:

১. নগদ অর্থের পরিমাণ :

এ বই সংরক্ষণ করে যে কোন সময় নগদ অর্থের পরিমাণ জানা যায়।

২. নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান সম্পর্কে জানা :

নগদান বই হতে কোন নির্দিষ্ট সময় মোট নগন প্রাপ্তি ও পরিশোধকৃত অর্থের পরিমাণ জানা যায়।

৩. ভুলত্রুটি হ্রাস :

এ বই থেকে হিসাবের কোন ভুল ত্রুটি আছে কিনা তা জানা যায় ফলে ভুল ত্রুটি হ্রাস পায়।

৪. তহবিল তছরুপ রোধ :

নগদান বই প্রস্তুতের মাধ্যমে তহবিল তছরুপ ও অপচয় রোধ করা যায়।

৫. জাবেদা ও খতিয়ানের সুবিধা :

নগদান বই জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ের কাজ করে থাকে। ফলে এ বই থেকে জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ের সুবিধা পাওয়া যায়।

৬. ভবিষ্যত রেফারেন্স :

সকল প্রকার নগদ লেনদেন এ বইতে লেখা হয় বলে ভবিষ্যতে যে কোন লেনদেন সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

৭. তহবিলের নিয়ন্ত্রণ :

ক্যাশিয়ারকে নগদ উদ্বৃত্তের সাথে নগদ তহবিল মিলিয়ে দিতে হয়। ফলে নগদ তহবিলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়।

৮. শ্রম ও সময়ের অপচয় হ্রাস :


নগদান বইয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও সময়ের অপচয়া হ্রাস করা যায়।

পরিশেষে বলা যায় নগদান বই হিসাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। তাই সব ধরণের প্রতিষ্ঠানে নগদান বই সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।

আরও পড়ুন :- দরপত্র কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ