দূষণ কাকে বলে? দূষণের প্রকারভেদ? দূষণের কারণ?

দূষণ কাকে বলে :-

মানুষ যে পরিবেশে বসবাস করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে, সে পরিবেশের বিঘ্ন সৃষ্টিতে সক্ষম ক্ষতিকর যে কোনো অবস্থার নাম দূষণ।

অন্যভাবে বলা যায় যে, রাসায়নিক, ভৌতিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের কোনো উপাদানের যে কোনো ধরনের নেতিবাচক পরিবর্তনই হলো দূষণ।

অর্থাৎ দূষণের ফলে পরিবেশের অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন ঘটে যা মানুষ, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, সভ্যতা প্রভৃতির ক্ষতিসাধন করে। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত দেখা যায় যে, বিভিন্ন কারণে পরিবেশের দূষণ ঘটছে যা জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। আর যেসব উপাদান দূষণ সৃষ্টি করে সেসব উপাদানকে দূষক (Pollutant) বলা হয়।

দূষণের কারণ :-

দূষণ সৃষ্টির কারণসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- মানবসৃষ্ট কারণ এবং প্রাকৃতিক কারণ।

১. মানবসৃষ্ট কারণ (Man-made Causes) :

মানুষের বহুমুখী কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশের যে দূষণ ঘটে সেগুলোকে মানবসৃষ্ট কারণ বলে। যেমন- শিল্প-কারখানার ধোঁয়া, তেজষ্ক্রিয় পদার্থের বিস্ফোরণ, ক্ষতিকর গৃহস্থালি বর্জ্য, কৃষিতে কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি।

আরও পড়ুন:- প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে?

২. প্রাকৃতিক কারণ (Natural Causes) :

অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণেও পরিবেশ দূষণ ঘটে। যেমন- অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নিঃসৃত সালফার-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস পরিবেশের উপাদানগুলোর দূষণ ঘটায়।
দূষণ কাকে বলে

দূষণের প্রকারভেদ :

দূষণের ফলে পরিবেশের যে উপাদানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেগুলো হলো বায়ু, পানি, মৃত্তিকা, শব্দ ইত্যাদি।

এসব দূষণের ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বিঘ্ন ঘটে এবং বিভিন্ন প্রকার রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। নিম্নে বর্ণিত ক থেকে ম পর্যন্ত দূষণগুলি পৃথিবীর উপরিভাগে হয়ে থাকে এবং ঙ নং দূষণটি ভূ-গর্ভে দেখা যায় ।

ক. বায়ু দূষণ (Air Pollution) :


প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম বায়ু দূষণ। জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বায়ু বিভিন্নভাবে দূষিত হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের মধ্যে যখন দূষিত গ্যাস, ধোঁয়া, ভস্ম ইত্যাদি ক্ষতিকর উপাদানের সমাবেশ ঘটে এবং এর প্রভাব হিসেবে মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদজগতের ক্ষতি করে, তখন তাকে বায়ু দূষণ বলে।

বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হলো কল-কারখানা ও যানবাহনের নির্গত কালো ধোঁয়া, গৃহস্থালি জ্বালানি, ময়লা আবর্জনা, অপরিকল্পিত পয়ঃপ্রণালি ইত্যাদি।

আরও জানুন:- বায়ু দূষণ সম্পর্কে?

খ. পানি দূষণ (Water Pollution) :

পানির সঙ্গে যখন কোনো অবাঞ্চিত পদার্থ মিশে যায়, তখন পানির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয় এবং জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণি, মানুষসহ জীবজগতের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তখন তাকে পানি দূষণ বলে।

পানি দূষণের অন্যতম কারণ হলো- কল-কারখানার বর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য, জলাধারের সাথে নর্দমার সংযোগ, কৃষিজাত দূষক, কীটনাশক, ক্ষতিকারক খনিজ পদার্থ, তেলবাহী জাহাজ দুর্ঘটনা, মৃত জীবজন্তু, তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য ইত্যাদি ।

গ. মৃত্তিকা দূষণ (Soil Pollution) :

মৃত্তিকা দূষণ বলতে শিল্প বর্জ্য, কৃষি বর্জ্য, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, জমাকৃত আবর্জনা এবং বিভিন্ন উপাদান মৃত্তিকার যে ক্ষতিসাধন করে তাকে বুঝায়।

মৃত্তিকা দূষণের অন্যতম কারণ হলো মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার, মাটি পোড়ানো, শিল্প বর্জ্য, মৃত্তিকার লবণাক্ততা, বন উজাড় প্রভৃতি। এছাড়া মৃত্তিকায় অপচনশীল পদার্থ যেমন পলিথিনের আধিক্য দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে।

ঘ. শব্দ দূষণ (Sound Pollution) :


মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতার ঊর্ধ্বে সৃষ্ট যে কোনো শব্দ যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ব্যাঘাত ঘটায় তাই হলো শব্দ দূষণ।

শব্দ দূষণের কারণ হলো বাস, ট্রাক, ট্রেন ও লঞ্চের হর্ণ, রেডিও, ক্যাসেট, টেলিভিশন ও মাইক উচ্চ শব্দে বাজানো। এছাড়া সাইরেন ও যুদ্ধসামগ্রীর শব্দ, বোমার বিস্ফোরণ, মেঘের গর্জন প্রভৃতি শব্দ দূষণের উৎস।

ঙ. আর্সেনিক দূষণ (Arsenic Pollution) :

আর্সেনিক দূষণ ভূ-পৃষ্ঠের নিচে অবস্থিত পানির স্তরে হয়ে থাকে। এ দূষণের ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, দুর্যোগ ও দূষণ উভয়ই মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিঘ্ন করে এবং সম্পদ ও জীবনহানি ঘটায়।

এছাড়া বিভিন্ন রোগ-জীবাণু ছড়ানোসহ পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে। সুতরাং দুর্যোগ ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে তা মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ