জলচক্র কাকে বলে? জলচক্রের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব? জলচক্রের প্রক্রিয়া?

জলচক্র কাকে বলে :-

সাধারণভাবে জলচক্র বলতে জল রূপান্তরের মাধ্যমে স্থানান্তর এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবার স্ব-স্থানে ফিরে আসাকে বুঝায়।

অন্যভাবে জলচক্র কাকে বলে তা বলা যায় যে, সূর্যরশ্মির তাপে জল সমুদ্র, হ্রদ, নদী এবং জলাধার থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। এছাড়া উদ্ভিদের প্রস্বেদনের মাধ্যমেও প্রচুর জল বাষ্পাকারে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। সেখান থেকে ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আবর্তিত হয়ে বারিপাতের মাধ্যমে পুনরায় ফিরে আসে। জলের এরূপ চক্রাকারে আবর্তনকে জল চক্র বলে।

জল চক্রই সমুদ্র, স্থলভাগ এবং বায়ুমন্ডলের জলের মধ্যে একটি সমতা রক্ষা করে।

জলচক্রের প্রক্রিয়া :-

জল চক্র হলো সমুদ্র থেকে বায়ুমণ্ডল এবং বায়ুমণ্ডল থেকে ভূ-পৃষ্ঠে প্রত্যাবর্তনের এক সুষম চক্রাকার আবর্তন। জল চক্রের সাথে নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াগুলো সম্পৃক্ত। যথা

১. বাষ্পীভবন (Evaporation)
২. ঘনীভবন (Condensation)
৩. বারিপাত (Precipitation) এবং
৪. অনুশ্রাবন (Percolation or Infiltration)।

১. বাষ্পীভবন :

বাষ্পীভবন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা দ্বারা সমুদ্র, হ্রদ, নদী বা জলাশয় থেকে সূর্যরশ্মির তাপে জল বাষ্পে পরিণত হয় এবং বায়ুমন্ডলে মিশে যায়। বায়ুর উষ্ণতার পরিমাণের উপর নির্ভর করে জলীয়বাষ্পের ধারণ ক্ষমতা। বাষ্পীভবনের জন্য জলীয়বাষ্প সরবরাহের ৮৪% আসে সমুদ্র থেকে এবং অবশিষ্ট ১৬% আসে স্থলভাগ থেকে ।

আরও পড়ুন :- জোয়ার ভাটা কাকে বলে?

২. ঘনীভবন :

বায়ু যত বেশি উষ্ণ হয় তত বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে। এ জলীয়বাষ্প উপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়।

৩. বারিপাত :

জলীয়বাষ্প শীতল ও ঘনীভূত হওয়ার পর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়। যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়, একে বারিপাত বলে।

বারিপাত বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। যেমন- বৃষ্টিপাত, তুহিন, তুষার ইত্যাদি। বায়ুমন্ডল হতে অধিকাংশ জলই বৃষ্টিপাতরূপে ফিরে আসে। ভূ-পৃষ্ঠে পতিত জলের একটি বড় অংশ নদী-নালার মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় সমুদ্রে পতিত হয়। বৃষ্টির জল প্রত্যক্ষভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হওয়ার পথে উদ্ভিদের ডালপালা ও পাতার দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়াকে ইন্টারসেপশন (Interception) বলে।

৪. অনুস্রাবন :

অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে জল ভূ-গর্ভে প্রবেশ করে গভীর স্তরে চলে যায় এবং ভূ-গর্ভস্থ জল হিসেবে জমা হয় যাকে অনুস্রাবন বলে।

পরবর্তীতে এই জল ঝর্ণা বা আন্তঃপ্রবাহের মাধ্যমে জল চক্রকে পরিপূর্ণ করে।

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, উপরিউক্ত প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে জল চক্র সম্পন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াটি সব সময় চলমান থাকে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
জল চক্র কাকে বলে

জলচক্রের বৈশিষ্ট্য :-

জল চক্রের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হলো

১. জল চক্রের অধঃপতন পদ্ধতি ভৌত শক্তির কর্মধারার উপর নির্ভরশীল।

২. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অধিক পরিমাণ বাষ্পীভবন হয়।

৩. এ চক্রটি দ্রুত আবর্তিত হয়।

৪. বারিপাতের ফলে স্থলভাগে বেশি জল ফিরে আসে।

৫. জল চক্র বিশ্বের জলের মধ্যে একটি সমতা রক্ষা করে।


জল চক্রের গুরুত্ব :-

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীবের অস্তিত্বের সাথে জলের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এছাড়া জল চক্র না থাকলে মহাসাগর এবং মহাদেশগুলোর মধ্যে জলের বিনিময় সম্ভব হতো না। ফলে নদ-নদী, খাল বা নালা ইত্যাদির মাধ্যমে জল স্থলভাগ থেকে সমুদ্রে পতিত হলে স্থলভাগ জল শূন্য হয়ে যেতো। এ শূন্যতা পূরণ করছে জল চক্র। এছাড়াও নিম্নোক্ত কারণে জল চক্র জীবজগতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১. মানব দেহের দুই-তৃতীয়াংশ জল।

২. জীবের অনুকূল তাপমাত্রা বজায় রাখে জল চক্র।

৩. দ্রাবক হিসেবে জল জীবের ক্ষরণ, রেচন, শোষণ, পরিবহন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

৪. জীবের শ্বসন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।

৫. শস্য উৎপাদনে জল ব্যবহৃত হয়।

৬. জল চক্রের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে জল ফিরে আসে এবং ধরিত্রী সবুজ শ্যামল থাকে।

৭. ভূ-গর্ভস্থ জলের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের জীবন রক্ষা করে।

সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রাণি ও উদ্ভিদজগতের জন্য জল চক্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ