জরিপ কাকে বলে? জরিপ কত প্রকার ও কি কি? জরিপের গুরুত্ব?

জরিপ কাজের প্রধান উদ্দেশ্য হল পরিমাপের মাধ্যমে কোন এলাকার মানচিত্র বা নকশা প্রস্তুত করা। জরিপকার্য এবং মানচিত্র অঙ্কন প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে একটি প্রচলিত পদ্ধতি।

যুগের তালে তালে এই জরিপ কার্যের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, গুণগত মান এবং ব্যবহার ও প্রয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আকাশ চিত্র ও উপগ্রহ চিত্র গবেষণার কাজে বেশী ব্যবহৃত হলেও এতে উপস্থাপিত তথ্যাদি অনেক সময় যাচাইয়ের তাগিদে ভূমি জরিপ প্রয়োজন হয়ে থাকে। সুতরাং এর প্রয়োজনীয়তা থাকবে এবং কখনই কমবে না।

জরিপ কাকে বলে :-

ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে বিভিন্ন বস্তুর প্রকৃত অবস্থান আপেক্ষিক উচ্চতা দিক, রৈখিক ও কৌনিক দূরত্ব পরিমাপের মাধ্যমে একটি স্কেল অনুসরণ করে সমতল কাগজে উপস্থাপন করার পদ্ধতিকে জরিপ বলে।

জরিপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং ভূগোলবিদদের নিকট এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেক দেশে সরকারী পর্যায়ে 'জরিপ বিভাগ' বলে একটি কার্যালয় দাতাদের কাজ হল দেশের সীমারেখা নির্ধারণ করা, প্রতিবেশী দেশের সাথে সীমারেখা নিয়ে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে তা নিরসন করা, দেশের জন্য সময়ে সময়ে ভূমি জরিপের মাধ্যমে মৌজা, ভূ-সংস্থানিক মানচিত্র তৈরী, নতুন তথ্য পুরাতন মানচিত্রে সংযোজন ইত্যাদি পরিচালনা করা।

আরও পড়ুন :- মেলা কি?  

জরিপের গুরুত্ব :-

নিম্নলিখিত কারণে জরিপ গুরুত্বপূর্ণ

১. মানচিত্র ও নকশা তৈরী করা

২. পূর্বে তৈরী করা মানচিত্রে বা নকশায় কোন নতুন বস্তুর অবস্থান বা তথ্য সন্নিবেশ করা।

৩. মৌজা মানচিত্র ও ভূ-সংস্থানিক মানচিত্র তৈরী করা (গবেষণা বা সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৪. বাঁধ, রাস্তা, রেলপথ, ইমারত, ভবন ইত্যাদি নির্মানের প্রাক্কালে এদের অবস্থা ও বিস্তার নিরুপন করা এবং

৫. প্রত্নতাত্ত্বিক, ভূ-তাত্ত্বিক এবং যে কোন উন্নয়নমূলক কাজে জরিপ পদ্ধতি ব্যবহার করা।
জরিপ কাকে বলে

জরিপ কত প্রকার ও কি কি :-

জরিপ কার্যকে জরিপ কার্যের সূক্ষতা, ধরন ও উদ্দেশ্য ব্যবহৃত পদ্ধতি এবং যন্ত্রপাতি প্রভৃতির উপর নির্ভর করে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।

জরিপ কার্যের সূক্ষতা নির্ভর শ্রেণীবিন্যাস :-

আমরা জানি পৃথিবী গোলাকার অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠে বক্তৃতা বিরাজ করছে। জরিপ কাজ বিস্তৃত এলাকা জুড়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। সুতরাং জরিপ কার্যে যদি পৃথিবীর বক্রতা বিবেচনাধীনে আনা না হয় তাহলে জরিপ কার্যের নির্ভুলতা বা সঠিকতা ব্যবহৃত হবে। কিন্তু স্বল্প পরিসর স্থানের জন্য এর প্রয়োজন নেই কেন না স্বল্প স্থানের জন্য পৃথিবীর উপরিভাগের বক্রতার প্রভাব খুবই নগণ্য। তাই জরিপ কার্যের সূক্ষতার উপর নির্ভর করে জরিপকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা

১. ধরাকৃতি জরিপ (Geodetic Survey)
২. সমতল জরিপ (Plane Survey)

আরও পড়ুন :- মানচিত্র স্কেল কাকে বলে?

ধরাকৃতি জরিপ :

বৃহৎ এলাকা (১০০ বর্গ মাইল বা ২৫৯ বর্গ কিঃমিঃ এর উর্ধে) জরিপ করার সময় জরিপ কার্যের সূক্ষতা রক্ষার্থে পৃথিবীর বক্রতা (curvature) বিবেচনায় আনা হয়।

সুতরাং যে জরিপ কার্যে পৃথিবীর বক্রতা হিসাব করা হয় তাকে ধরাকৃতি জরিপ বলে।

সাধারণত ১০০ বর্গ মাইল বা ২৫৯ বর্গ কিঃ মিঃ বা তার বেশী এলাকা জরিপ করতে হলে পৃথিবীর বক্রতা হিসাব করতে হয়। সাধারণ নিয়মে প্রতি ৩৪.৫ মাইল বা ৫৫.৫ কিঃ মিঃ এর জন্য ১ ফুট বা ০.৩০৪৮ মিঃ পরিমাণ বক্তৃতা বিরাজ করে।

অতএব, জরিপকৃত এলাকার জন্য এই হিসাব অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে তা না হলে জরিপ কার্যের সূক্ষতা ভীষণভাবে লোপ পাবে।

সমতল জরিপ :

যে জরিপে পৃথিবীর বক্রতা হিসাব করা হয় না অর্থাৎ ১০০ বর্গ মাইল বা ২৫ বর্গ কিঃ মিঃ এর কম এলাকার জন্য যে জরিপ পরিচালনা করা হয় তাকে সমতল জরিপ বলে।

স্বল্প পরিসর স্থানে পৃথিবীর বক্রতার খুব একটা প্রভাব থাকে না বিধায় সমতল জরিপে সুক্ষতা বজায় থাকে। জরিপের উদ্দেশ্য ও ব্যবহার এবং ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতির আলোকে জরিপকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ