রাসায়নিক আবহবিকার কাকে বলে? রাসায়নিক বিচূর্ণীভবনের প্রক্রিয়া?

রাসায়নিক আবহবিকার কাকে বলে :-

যে প্রক্রিয়ায় শিলারাশি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে খনিজের গঠন কাঠামোর পরিবর্তন হয় তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন বলে।

শিলা বিভিন্ন প্রকার খনিজের সমন্বয়ে গঠিত। এসব খনিজ সংযোগ সাধক পদার্থের দ্বারা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। খনিজের উপর বায়ুস্থিত অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানি ইত্যাদির বিক্রিয়ায় দরুণ কঠিন শিলা বিশ্লিষ্ট বা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় এবং খনিজ পদার্থগুলো নতুন গৌণ খনিজে পরিণত হয় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

যেমন- অক্সিজেন লৌহের সংস্পর্শে এলে তাতে মরিচা ধরে এবং ক্রমেই তাকে ক্ষয় করে। তাম্র, পিতল ও কাঁসা এরূপে ক্ষয় হয়।

কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বৃষ্টির পানির সাথে মিশে রাসায়নিক উপায়ে গ্রানাইট, চুনাপাথর প্রভৃতি কঠিন শিলাকে অবিরত খন্ড-বিখন্ড করছে। আবার পানি অনেক ক্ষেত্রে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলারাশিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করছে। উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে রাসায়নিক বিচূর্ণীভবন সবচেয়ে বেশি। কিন্তু হিম ও উষ্ণমণ্ডলে এরূপ বিচূর্ণীভবন খুবই কম।

রাসায়নিক বিচূর্ণীভবনের ফলে নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করা যায় -

ক) শিলার আয়তন বৃদ্ধি পায়।

খ) অপেক্ষাকৃত ভারী খনিজ হালকা খনিজে পরিণত হয়।

গ) পরিবর্তিত খনিজগুলোর আকার অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। ফলে এর পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়।

ঘ) অধিকতর পরিবহনযোগ্য পদার্থের সৃষ্টি হয়।

ঙ) খনিজের গঠন কাঠামোর পরিবর্তন হয়।


রাসায়নিক বিচূর্ণীভবনের প্রক্রিয়া :-

রাসায়নিক বিচূর্ণীভবন প্রধানত নিম্নলিখিত ৫টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। যথা

১. জলযোজন,

২. হাইড্রোলিসিস্,

৩. জারণ,

৪. অঙ্গার-যোজন এবং

৫. দ্রবণ।
রাসায়নিক আবহবিকার কাকে বলে

নিম্নে এ প্রক্রিয়াগুলো আলোচনা করা হলো

১. জলযোজন (Hydration) :

রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খনিজের সঙ্গে পানি যুক্ত হয়ে খনিজের যে পরিবর্তন ঘটে, তাকে জলযোজন বা হাইড্রেশন বলা হয়। জলযোজনে শিলার মধ্যস্থিত খনিজ পদার্থ পানির সংস্পর্শে বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়। কোনো কোনো খনিজ বায়ু হতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পানি গ্রহণ করে আকারে বৃদ্ধি পাওয়ায় শিলার ভিতরে টানের সৃষ্টি হয়। এবং এভাবে শিলা সহজেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়।

২. হাইড্রোলিসিস্ (Hydrolysis ) :

এ প্রক্রিয়ায় পানি (H2O) হাইড্রোজেন আয়ন (H+) এবং হাইড্রোক্সিল আয়নে (OH) ভেঙে যায় এবং এ হাইড্রোক্সিল খনিজের মধ্যে রাসায়নিক উপায়ে পরিবর্তন ঘটায়।

আগ্নেয়শিলায় প্রাপ্ত প্রধান দুটি খনিজ অভ্র ও ফেলসপারের রাসায়নিক পরিবর্তন অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়।


৩. জারণ (Oxidation) :

খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন সংযুক্ত হলে তাকে জারণ বা অক্সিডেশন বলে।

স্বাভাবিক অবস্থায় অক্সিজেন শিলারাশিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে না পারলেও বায়ুতে অধিক জলীয়বাষ্প থাকলে তা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলারাশিকে খন্ড-বিখন্ড করতে পারে। অক্সিজেনের এরূপ ক্রিয়াকে জারণ বা অক্সিডেশন বলে।

বর্ষাকালে বায়ুতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে বলে ঐ সময় অক্সিজেনের রাসায়নিক বিচূর্ণীভবন সবচেয়ে বেশি হয়। এ কারণে বর্ষাকালে লৌহ দ্রব্যে বেশি মরিচা ধরে। কারণ লৌহের সাথে অক্সিজেন যুক্ত হওয়ায় লৌহের উপরিভাগের রং হলুদ বা বাদামী হয়। লৌহ যখন ফেরাস অক্সাইড রূপে থাকে তখন তা খুব শক্ত হয়। কিন্তু অক্সিজেনের রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এটি ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয় এবং সহজেই খন্ড-বিখন্ড হয়। এ কারণে দেখা যায় যে, লৌহ মিশ্রিত দ্রব্যে মরিচা ধরে সহজে নষ্ট হয়ে যায়।

৪. অঙ্গারযোজন (Carbonation) :

বিভিন্ন খনিজের সঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইডের রাসায়নিক সংযোজনকে অঙ্গার যোজন বা কার্বনেশন বলে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বৃষ্টির পানির সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনিক এসিডে পরিণত হয়। কার্বন ডাই-অক্সাইডের এইরূপ রাসায়নিক সংযোগকে অঙ্গার যোজন বা কার্বনেশন বলে।

যেসব শিলা কার্বনিক এসিড দ্বারা গলে বা ভেঙে যায় সেগুলোতে সাধারণত ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম এবং লৌহ বিদ্যমান থাকে। এই উপাদানগুলো এসিডের সংস্পর্শে আসতে শুরুকরে। ফলে শিলাগুলি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়।

৫. দ্রবণ (Solution) :

সরাসরি পানির দ্বারা খনিজ পদার্থ দ্রবীভূত হয় না বা গলে যায় না। কিন্তু শিলার মধ্যস্থিত কোনো কোনো খনিজ দ্রব্য রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এমন এক স্থানে এসে উপস্থিত হয় তখন তা সহজেই দ্রবীভূত হয়ে পড়ে বা গলে যায়।

যেমন- ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) যখন ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত হয়, তখন তা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে অপসারিত হয়। তাই বলা হয়ে থাকে যে, দ্রবণ প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে বিচূর্ণীভবন ঘটায়।

আরও পড়ুন:- বারিমন্ডল কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ