শিখন কাকে বলে? শিখন কত প্রকার ও কি কি? শিখনের বৈশিষ্ট্য লিখ?

শিখন কাকে বলে :-

প্রতিটি প্রাণীই কতকগুলো সহজাত আচরণ এবং প্রতিবর্তি ক্রিয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এসব জন্মগত সামর্থ্য পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে সামগুস্য বিধান করে চলার পক্ষে সবসময় পর্যাপ্ত নয়।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং পরিবর্তিত পরিমণ্ডলে সাফল্যের সাথে টিকে থাকার জন্য প্রায় প্রতিটি প্রাণীকেই নতুন কিছু আচরণ আয়ত্ত করতে হয়। অতীত অভিজ্ঞতাই প্রাণীকে নতুন কিছু আয়ত্ত করতে ও নতুন আচরণ প্রদর্শণ করতে সাহায্য করে।

জন্মের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রাণীর অতীত অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মাধ্যমে নতুন আচরণ আয়ত্ত করাকে শিখন বলা যেতে পারে।

বিভিন্ন বিজ্ঞানী শিখনের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন- মার্কিন বিজ্ঞানী জে. এ. ম্যাকগোচ (McGoach) শিখনের সংজ্ঞাতে বলেছেন, “শিখন হলো অভ্যাসের ফলে ক্রিয়ার পরিবর্তন।"

আবার ওয়াটসন (Watson) ও বার্নার্ড (Bernard) এর মতে, “শিখন হলো আচরণের পরিবর্তন।"

আরও পড়ুন :- জীব প্রযুক্তি কাকে বলে?

সি.টি. মর্গান (CT. Morgan) ও আর. এ. কিং (R. A. King) ১৯৬৬ সালে শিখনের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন, “অতীত অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনের ফলে আচরণের অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তনকে শিখন বলা যায়।"

শিখন আচরণ এর বৈশিষ্ট্য :-

১. এ আচরণ প্রদর্শনের জন্য অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।

২. উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে নতুন সম্পর্ক স্থাপন হয়।

৩. শিখন সর্বদা অভিযোজনীয়। এটি সাধারণত উচ্চ শ্রেণির প্রাণীতে দেখা যায়।

৪. প্রজাতি নির্দিষ্ট নয়। একই প্রজাতির প্রাণীদের মাঝে ভিন্ন রকমের অথবা বিভিন্ন প্রজাতির মাঝে একই রকমের শিখন আচরণ পরিলক্ষিত হতে পারে।

৫. শিখন আচরণ সর্বদা পরিবর্তনশীল।

৬. বংশ পরম্পরায় প্রদর্শিত হয়না।

৭. এটি জটিল প্রকৃতির এবং শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয়।
শিখন কাকে বলে

শিখন আচরণ এর প্রকারভেদ :-

বিজ্ঞানীদের মতে শিখন আচরণকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা-

১. অভ্যাসগত শিখন :

প্রাণীর শিক্ষালাভের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো অভ্যাসগত আচরণ। কোন কোন প্রাণী পুনঃপুনঃ উদ্দীপনায় বার বার সাড়া প্রদান করে। কিন্তু যদি উদ্দীপনা বার বার দেয়া হতেই থাকে তবে সেই উদ্দীপনায় প্রাণী আর সাড়া দেয় না।

যেমন- অভ্যাসগত আচরণের কারণে চামড়া শিল্পকারখানার শ্রমিকরা দূগন্ধময় পরিবেশে কাজ করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে পরে।

আরও পড়ুন :- হেমাটোপরেসিস কি?

২. সাপেক্ষণ শিখন :

কোন উদ্দীপকের প্রতি শর্তাধীন সাড়া দেয়ার কারণে প্রাণী যে শিখন আচরণ অর্জন করে তাকে সাপেক্ষণ শিখন বলে।

যেমন- খাবার দেয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট শব্দ করে পোষা প্রাণীকে নিয়মিত খাবার দেয়া হলে, পরবর্তীতে খাবার না দিয়েও ঐ শব্দ করলে পোষা প্রাণীটি সাড়া প্রদান করে।

৩. পরীক্ষালব্ধ শিখন :

ভুল সংশোধনের মাধ্যমে বা তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে প্রাণী যে শিক্ষালাভ করে তাকে পরীক্ষালব্ধ শিখন বলে।

যেমন- ব্যাঙ যদি কখনো মৌমাছিকে মুখে নিয়ে গিলে ফেলার চেষ্টা করে মৌমাছিটি তখন ব্যাঙের মুখে হুল ফুটিয়ে দেয় এবং ব্যাঙ বুঝতে পারে যে মৌমাছিটি তার খাদ্য নয়। পরবর্তীতে মৌমাছি দেখলে ব্যাঙ আর তাকে খাওয়ার চেষ্টা করে না।

৪. অনুকরণ শিখন :

সচরাচর প্রাণীর জীবনের কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত কিছু অভিজ্ঞতার আলোকে তার আচরণের যে সব হঠাৎ স্থায়ী পরিবর্তন হয় তাকে অনুকরণ শিখন বলে।

যেমন- ডিম ফুটে বের হয়েই হাঁস-মুরগির বাচ্চারা অনুকরণ করে হাটতে শেখে।

৫. প্রচ্ছন্ন বা সুপ্ত শিখন :

প্রাণীর মাঝে যখন কোন বৈশিষ্ট্য সুপ্তাবস্থায় থাকে এবং পরবর্তীতে পারিপার্শ্বিক কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেই বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ হয় তখন তাকে প্রচ্ছন্ন বা সুপ্ত শিখন বলে।

যেমন- পাখির বাসা বানানোর প্রবণতা তাদের মাঝে সুপ্তাবস্থায় থাকে কিন্তু প্রজনন কালে তা জাগ্রত হয়।

আরও পড়ুন :- স্ত্রী প্রোজনন তন্ত্র কি?

৬. অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন :

পরিস্থিতি হঠাৎ করে কোন সমাধান খুঁজে নেয়াই হলো অন্তদৃষ্টিমূলক শিখন।

যেমন- জার্মান মনোবিজ্ঞানী Wolfgang Kohler ( 1920 ) শিম্পাঞ্জির ক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন আচরণ পরীক্ষা করেন।

তিনি পরীক্ষায় দেখেন যে, শিম্পাঞ্জির খাঁচায় কতগুলো কাঠের বাক্স এলোমেলো ভাবে রেখে ওই খাঁচায় শিম্পাঞ্জির নাগালের বাইরে কলা টানিয়ে রাখলে, শিম্পাঞ্জি তার নিজ বুদ্ধি খাটিয়ে বাক্সের উপর বাক্স রেখে তার উপরে দাড়িয়ে কলা পেড়ে খায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ