লসিকাতন্ত্র কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? এর কাজ?

লসিকাতন্ত্র কাকে বলে :-

মানব দেহে রক্ত একটি অন্যতম পরিবহন মাধ্যম যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ বিভিন্ন কোষ কলায় (Tissue) পৌঁছে এবং বিভিন্ন বিপাকীয় পদার্থ রেচনের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গে বাহিত হয়।

অন্যদিকে দেহের সমস্ত কলা (Tissue) পূর্ণ কৈশিক জালিকায় বেষ্টিত থাকে। রক্তের কিছু উপাদান কৈশিক জালির প্রাচীর ভেদ করে কোষের চারপাশে অবস্থান করে। এ উপাদানগুলোকে লসিকা (lymph) বলে।

কৈশিক জালিকা ছাড়াও কিছু পরিমাণ কলারস এক ধরনের বন্ধ নালি দিয়ে গৃহীত ও পরিবাহিত হয়ে পুনরায় রক্তে ফিরে আসে। এ সব নালিকে “লসিকা নালি" (Lymph vessels) বলে।

অতএব লসিকা, লসিকানালি ও লসিকাগ্রন্থি সমন্বয়ে গঠিত অন্ত্রকে “লসিকাতন্ত্র” বলে।

লসিকা এক ধরনের পরিবর্তিত ঈষৎ ক্ষারধর্মী স্বচ্ছ কলারস যা লসিকা নালির ভেতর দিয়ে পরিবাহিত হয়ে দেহের সকল কোষকে সিক্ত করে। এতে লোহিত রক্ত কণিকা ও অণুচক্রিকা অনুপস্থিত কিন্তু শ্বেত কণিকার সংখ্যা অত্যাধিক। লসিকা ৯৪% পানি ও ৬% কঠিন পদার্থ থাকে।

আরও পড়ুন :- সাইনুসাইটিস কাকে বলে?

যেমন- প্রোটিন, স্নেহ পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট, নাইট্রোজেনযুক্ত পদার্থ, ফসফরাস, সোডিয়াম, ক্লোরাইড, কিছু এনজাইম ও অ্যান্টিবডি। মানুষের দেহে লসিকার পরিমাণ ১-২ লিটার।

লসিকা নালি (Lymph vessels) :-

লসিকা জালিকা থেকে কতকগুলো নালি একত্রে মিলিত হয়ে লসিকা নালি গঠিত।

লসিকা নালি দু'ধরনের। যথা-

(১) অন্তর্মুখী লসিকা নালি ও

(২) বহির্মুখী লসিকা নালি।

অন্তর্মুখী পলিকা নালি : যে নালি লসিকাকে লসিকা অস্থির দিকে বহন করে তাকে অন্তর্মুখী লসিকা নালি বলে।

বহির্মুখী লসিকা নালি : যে নালি লসিকা গ্রন্থি হতে লসিকা বহন করে, তাকে বহির্মুখী লসিকানালি বলে।

সাধারনত পেশি সঞ্চালন, শ্বাস কাজ ও ধর্মনির কাঁপনে দেহে লসিকা প্রবাহিত হয়। অন্ত্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লসিকাকে ল্যাকটিয়াল বলে।

লসিকা গ্রন্থি (Lymph Gland) :-

লসিকা নালিতে বেশ কাছাকাছি অবস্থিত গোলাকার বা ডিম্বাকার ফোলা অংশগুলোকে “লসিকা গ্রন্থি” বলে।

আরও পড়ুন :- রক্ত কাকে বলে?

যান্ত্রিক ছাঁকুনি হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন জীবাণু ও ক্ষতিকর কোষের হাত থেকে এগুলো দেহকে রক্ষা করে। ঘাড়ে, বগলে ও কুঁচকিতে লসিকা গ্রন্থি থাকে।

লসিকার কাজ :-

প্রোটিন পরিবহন: কলার ফাঁকা স্থান থেকে প্রোটিন লসিকার মাধ্যমে রক্তে ফিরে আসে।

স্নেহ পরিবহন : যে সব স্নেহ কলা কৈশিক নালির বাধা অতিক্রমে অক্ষম সেগুলো লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। 

পুষ্টি সরবরাহ: দেহের যে সব কলা কোষে রক্ত পৌছাতে পারে না সেখানে লসিকা অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। 

শোষণ: স্নেহ পদার্থ অন্ত্র থেকে শোষিত হয়ে লসিকার মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।

প্রতিরক্ষা: লসিকায় অবস্থিত প্রচুর শ্বেত কণিকা দেহের প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকে।

প্রতিরোধ : B-লিম্ফোসাইট থেকে উৎপন্ন অ্যান্টিবডি দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

দেহ রসের সংবহন: রক্ত সংবহনের এক অংশ থেকে অন্য অংশে তরল পদার্থের পরিবহনে অংশ নেয়।

আরও পড়ুন :- অঙ্গ ও তন্ত্র কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ