একচেটিয়া বাজার কাকে বলে? একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা?

একচেটিয়া বাজার কাকে বলে :-

একচেটিয়া বাজারের প্রতিশব্দ Monopoly. Mono অর্থ একমাত্রা এবং poly অর্থ বিক্রেতা। অতএব যে বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও একজন বিক্রেতা বাজারে অবস্থান করে তাকে একচেটিয়া বাজার বলে। সুতরাং কোন দ্রব্য যখন একজন মাত্র বিক্রেতা বিক্রয় করতে পারে তখন সেই দ্রব্যের বাজারকে একচেটিয়া বাজার বলে।

এ বাজারে বিক্রেতার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে না এবং প্রব্যেরও কোন ঘনিষ্ঠ পরিবর্তক দ্রব্য থাকে না। সেজনা এবাজারে বিক্রেতা প্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। এ ধরণের বাজারে দ্রব্যের যোগান ও দামের উপর বিক্রেতার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজানা থাকে।

অধ্যাপক এ. কুর্টসোয়ানিস এর মতে “ একচেটিয়া বাজার হচ্ছে এমন একটি বাজার কাঠামো যেখানে একক বিক্রেতা থাকে, দ্রব্যের কোন ঘনিষ্ঠ পরিবর্তক থাকে না এবং বাজারে প্রবেশের বাধা বিদ্যমান। "

একচেটিয়া বাজারের বৈশিষ্ট্য :-

১. একজন বিক্রেতা :

একচেটিয়া বাজারে একটি দ্রব্যের কেবল একজন বিক্রেতা থাকতে পারে। আর এজন্য দ্রব্যের যোগানের উপর বিক্রেতার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।

২. ক্রেতার সংখ্যা :

এ বাজারে বহু সংখ্যক ক্রেতা থাকে। এর জন্য ক্রেতা ক্রয়ের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করে মূল্যের উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে না। বরং বিক্রেতা কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে দ্রব্য ক্রেতা এনা করে।

আরও পড়ুনঃ অর্থের যোগান কাকে বলে?

৩. পরিবর্তক দ্রব্য নেই :

একচেটিয়া বাজারে কোন উৎপাদিত পণ্যের ঘনিষ্ঠ পরিবর্তক দ্রব্য নেই । ফলে ক্রেতা অন্য দ্রব্য ক্রয় করে তার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম নহে।

৪. যোগান নিয়ন্ত্রণ :

এ বাজারে একজন উৎপাদক বা বিক্রেতা থাকে ফলে উৎপাদনকারী দ্রব্যের উৎপাদন ও যোগান সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

৫. দাম নিয়ন্ত্রণ :

উৎপাদনকারী দ্রব্যের উৎপাদন ও যোগানের উপর সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে সে কম পরিমাণে উৎপাদন করে বেশি মূল্যে বাজারে বিক্রয় এবং অপরদিকে বেশি উৎপাদন করে কম মূল্যে দ্রব্যটি বিক্রয় করতে পারে।

৬. দ্রব্যের চাহিদা ও দাম নির্ধারণ :

এ বাজারে বিক্রেতা দ্রব্যের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার উপর নির্ভর করে মূল্য নির্ধারণ করে এবং তা পরিবর্তনযোগ্য। যে বাজারে তার দ্রব্যের চাহিদা অস্থিতিস্থাপক সেই বাজারে বেশি মূল্য এবং যে বাজারে তার দ্রব্যের চাহিদা স্থিতিস্থাপক সেই বাজারে কম মূল্য নির্ধারণ করে।

৭. গড় আয় (AR) ও প্রান্তিক আয় (MR) রেখার আকৃতি :

একচেটিয়া বাজারে বিক্রি বাড়াতে হলে মূল্য কমাতে হয় এজন্য গড় আয় রেখা বা চাহিদা রেখা ডানদিকে নিম্নগামী হয়। আর প্রান্তিক আর গড় আয়ের চেয়ে কম হওয়ায় প্রান্তিক আয় রেখা গড় আয় রেখার নিচে অবস্থান করে।

৮. শিল্পে প্রবেশ ও প্রস্থানের অধিকার :

বাজারে নতুন কোন উৎপাদক প্রবেশ বা প্রস্থান করতে পারবে না।

৯. বিজ্ঞাপন খরচ :

এ বাজারে কোন প্রতিযোগিতা না থাকায় এবং দ্রব্যটি একক হওয়ায় ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য কোন বিজ্ঞাপনের প্রায় না।

আরও পড়ুনঃ অর্থের চাহিদা কাকে বলে?

১০. মুনাফা :

একচেটিয়া বাজারের বিক্রেতার লক্ষ্য থাকে মুনাফা সর্বোচ্চকরণ করা।

১১. নিয়ন্ত্রণ :

এ বাজার সাধারণত সরকার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

একচেটিয়া বাজারের সুবিধা :-

একচেটিয়া বাজারে সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অসুবিধা। নিম্নে প্রথমে একচেটিয়া কারবারের সুবিধা এবং পরে অসুবিধা আলোচনা করা হলো: একচেটিয়া কারবারের সুবিধা গুলো হলো

১. মাত্রাগত সুবিধা :

যে সকল শিল্পে প্রচুর মূলধন নিয়োগের প্রয়োজন হয় সেগুলোতে একচেটিয়া ফার্ম থাকলে তা জনগনের জন্য কল্যাণকর হয়। যেমন: মটর গাড়ী, রাসায়নিক শিল্প ইত্যাদি। এসব শিল্পে একচেটিয়া ব্যবসা পরিচালিত হলে তাতে মাত্রাগত সুবিধা দেখা দেয়। যেমন: অর্থনৈতিক মিতব্যয়িতার কারণে জনগণ কম দামে এসব শিল্প দ্রব্য ক্রয়ের সুযোগ পায়।

২. উন্নয়নমূলক সুবিধা :

একচেটিয়া কারবারি গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ সরবরাহ করতে পারে। তাতে অনেক সময় গবেষণার ফলে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় এবং কম দামে দ্রব্য বিক্রয় করা যায়।

৩. ভোগ বৃদ্ধি করা :

একচেটিয়া কারবারি দীর্ঘকালে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করলেও দীর্ঘকালে বিভিন্ন নতুন বা উদ্ভাবন করে জনগনের জন্য প্রস্তুত করতে পারে। এতে সমাজের উপকার হয়।

একচেটিয়া বাজারের অসুবিধা :-

১. আয় বৈষম্য সৃষ্টি :

একচেটিয়া কারবারি থাকলে সমাজের বেশির ভাগ অর্থ তাদের হাতে জমা হয়। এতে সমাজে আরও বৈষম্য দেখা দেয়।

২. অদক্ষতা :

একচেটিয়া কারবারি যে দামে তার উৎপাদন পরিচালনা করে তা তার প্রান্ত্রিক ব্যয়ের চেয়ে বেশি হয় তাতে সম্পদ ব্যবহারে অদক্ষতা দেখা দেয়। ফলে ভোক্তা দ্রব্যের মূল্য বেশি দিতে বাধ্য হয়।

৩. অতিরিক্ত মূল্য আদায় :

একচেটিয়া কারবারি অনেক সময় অতি মুনাফার লোভে জনস্বার্থ বিরোধী পণ্য উৎপাদন করতে পারে। এমনকি ন্যায্য মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য আদায় করতে পারে। আবার অনেক সময় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক থাকায় সমাজের কিছু মানুষ বঞ্চিত হতে পারে। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেনির মানুষ বেশি দামে দ্রব্য কয় করতে পারে না।

আরও পড়ুনঃ বাজার ভারসাম্য কাকে বলে?

৪. দ্রব্যের গুনগত মান হ্রাস :

যেহেতু একচেটিয়া কারবারি কোনো প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় না সেহেতু সে অনেক সময় পণ্যের গুনগত মান রক্ষা না করেই পণ্য বাজারজাত করতে পারে তাতে সমাজের মানুষ গুনগতমান সম্পন্ন দ্রব্য হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ