উপযোগ কাকে বলে? উপযোগ কত প্রকার ও কি কি?

উপযোগ (utility) ভোক্তার আচরণ বিশ্লেষণের একটি অন্যতম বিষয়। একজন ভোক্তা এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেতার সাথে কেমন আচরন করে তা মূলত উপযোগ বিশ্লেষণ হতে জানা যায়। আমরা জানি প্রব্যের মূল্য সাধারণত তার যোগানের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে তা সত্য না দ্রব্যের মূল্য উপযোগের উপর নির্ভরশীল একটি প্রব্যের মূল্য কত হবে তা মূলত নির্ভর করে ঐ দ্রব্য থেকে কী পরিমাণ উপযোগ পাওয়া যায় তার উপর।

উপযোগ কাকে বলে :-

উপযোগ বলতে সাধারণত কোনো দ্রব্য থেকে প্রাপ্ত ভক্তির পরিমাণকে বোঝায়। কিন্তু, অর্থনীতিতে উপযোগ শব্দটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থনীতিতে উপযোগ বলতে অভাব পূরণের ক্ষমতাকে বোঝায়। যে বস্তুর মধ্যে অভাব পূরণের ক্ষমতা রয়েছে তার উপযোগীতা রয়েছে বলা যাবে।

উদাহরণসরূপ বলা যায়, একজন ব্যক্তির পিপাসা পেলে সে যদি এক গ্লাস পানি পান করে তবে তার পিপাসা লাঘব হবে। কারণ, পানির মধ্যে পিপাসা লাঘব করার ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ পানির উপযোগ রয়েছে।
 
আরও পড়ুনঃ চাহিদা কাকে বলে?

উপযোগ একটি মানসিক ধারণা। একটি নির্দিষ্ট দ্রব্যের উপযোগ এক এক ব্যক্তির নিকট এক এক রকম হতে পারে। যেমন, একটি সিগারেটের যথেষ্ট উপযোগ থাকতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তি সিগারেট খায় না তার কাছে সিগারেটের কোনো উপযোগ নাই।

অর্থনীতিবিদ মেয়ার্স বলেছেন, ” উপযোগ হচ্ছে কোনো দ্রব্যের বিশেষ গুণ বা ক্ষমতা যা মানুষের অভাব পূরণ করতে পারে।"

উপযোগের বৈশিষ্ট্য :-

উপযোগের কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন

১. উপযোগ একটি মানসিক ধারণা। একজন ভোক্তা কোনো দ্রব্য থেকে যে পরিমাণ তৃপ্তি পেয়ে থাকে তা কোনো কিছু নিয়ে পরিমাপ করা অসম্ভব। কারণ এটি অনুভব এবং উপলব্ধির বিষয়।

২. একই দ্রব্যের উপযোগ স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন, গ্রীষ্মকালে আইসক্রীম এর উপযোগ যতটা হয় শীতকালে তা হয় না।

৩. উপযোগ ব্যক্তির রুচি, অভ্যাস ও আয়ের উপর নির্ভরশীল। কোনো দ্রব্যের ভোগ ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তার উপযোগ হ্রাস পায়।

উপযোগের প্রকারভেদ :-

পরিমাণের দিক থেকে উপযোগ তিন ধরণের। যথা-

  1. মোট উপযোগ,
  2. প্রান্তিক উপযোগ এবং
  3. গড় উপযোগ

এগুলো উদাহরনসহ আলোচনা করা হলো -

১. মোট উপযোগ :-

একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগের সমষ্টি হলো মোট উপযোগ। উপযোগ যদিও একটি মানসিক ধারণা তথাপি অধ্যাপক আলফ্রেড মার্শাল উপযোগকে সংখ্যাসূচক পদ্ধতির মাধ্যমে পরিমাপ করেছেন। তাই, মোট উপযোগ বিশ্লেষণে আমরা এখানে সংখ্যার মাধ্যমে উপযোগ পরিমাপ করব।

ধরা যাক, একজন ভোক্তা ৫টি আপেল ক্রয় করে এবং ক্রমাগত ভোগ করে। এক্ষেত্রে সে ১ম আপেল হতে ১০ একক, ২ আপেল হতে ০৮ একক, ৩য় আপেল হতে ০৬ একক, ৪র্থ আপেল হতে ০৪ একক এবং ৫ম আপেল হতে ০২ একক উপযোগ লাভ করে। এখানে ভোক্তা ০৫ টি আপেল হতে মোট ৩০ একক উপযোগ ( ১০ একক+o৮ একক+০৬ একক+০৪ একক+০২ একক) পেয়েছে। এই ৩০ একক উপযোগ হলো মোট উপযোগ।

উল্লেখ কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দ্রব্যের বিভিন্ন একক ভোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে মোট উপযোগ বৃদ্ধি পায় তবে তা ক্রমহ্রাসমান হারে বৃদ্ধি পায়।

২. প্রান্তিক উপযোগ :-

কোনো দ্রব্যের অতিরিক্ত একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগ হলো প্রান্তিক উপযোগ। অন্য ভাবে বললে কোনো দ্রব্যের অতিরিক্ত এক একক ভোগ বৃদ্ধির ফলে মোট উপযোগে যে পরিবর্তন আসে তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলে। সেই অতিরিক্ত একক স্কুলও হতে পারে আবার অতি ক্ষুদ্রও হতে পারে। কোনো দ্রব্য ভোগের পরিবর্তন দিয়ে মোট উপযোগের পরিবর্তনকে ভাগ করলে পাওয়া যায় প্রান্তিক উপযোগ।

আরও পড়ুনঃ ফার্ম কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ