চাহিদা কাকে বলে?

আমাদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের চাহিদা রয়েছে। চাহিদার শেষ নেই। একটি চাহিদা মেটাতে না মোনতেই কারো অনেক চাহিদার সৃষ্টি হয়। চাহিদার সৃষ্টি আবার যোগানের উপর নির্ভরশীল। তাই বলা হয়, যোগাই আসি করে। যে সময়ে যোগান যত বেশি সেখানে চাহিদাও তত বেশি।

চাহিদা শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো "Demand"। সাধারণত কোনো দ্রব্য বা সেবা পাওয়ার আকাঙ্খাকে চাহিদা বলে। কিন্তু অর্থনীতিতে চাহিদা ধারণাটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।

চাহিদা কাকে বলে :-

সাধারণত চাহিদা বলতে কোনো দ্রব্য বা সেবা পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্খাকে বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে এটি চাহিদা নয়। অর্থনীতিতে চাহিদা হতে হলে কোনো দ্রব্য বা সেবা পাওয়ার আকাঙ্খার সাথে সাথে ঐ দ্রব্য বা সেবা তন্য করার সামর্থ্য এবং অর্থ ব্যয় করে দ্রব্যটি ক্রয়ের ইচ্ছা থাকলেই তাকে চাহিদা বলা যাবে।

একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে বিষয়টিকে স্পষ্ট করা যায়। ধরাযাক, একজন ভিক্ষুক একটি মোটর গাড়ী ক্রয়ের ইচ্ছা পোষণ করল। ভিক্ষুকের এই ইচ্ছা অর্থনীতিতে চাহিদা বলে বিবেচিত হবে না। কারণ মোটর গাড়ী ক্রয় করার সামর্থ্য তার নেই। আবার ধরা যাক একজন ধনী লোক একটি মোটর গাড়ীক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করল। কিন্তু সে কৃপণ অর্থাৎ সে অর্থ খরচ করে মোটর গাড়ী কিনতে চায় না। এক্ষেত্রেও তা চাহিদা হবে না। তাই অর্থনীতিতে চাহিদা হতে হলে তিনটি শর্ত অবশ্যই পূরণ হতে হবে। এই তিনটি শর্ত হলো

ক) কোনো দ্রব্য বা সেবা পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্খা।

খ) ঐ দ্রব্যটি জমা করার সামর্থ্য।

গ) অর্থ ব্যয় করে ঐ দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করার ইচ্ছা।

আরও পড়ুনঃ বাজার ভারসাম্য কাকে বলে?

তাই বলা যায়, উপরোক্ত তিনটি শর্ত একযোগে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোন দ্রব্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে পূরণ হলে তাকে চাহিদা বলা হয়।

চাহিদা অপেক্ষক কাকে বলে :-

চাহিদা অপেক্ষক বুঝতে হলে প্রথমে অপেক্ষক কী তা বুঝতে হবে। আর অপেক্ষক বুঝার জন্য চলক সম্পর্কে ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। আমরা জানি যেসব রাশির মান পরিবর্তনশীল এবং ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন মান গ্রহন করতে পারে সেগুলোকে চলক বলা হয়। ইংরেজি বর্ণমালার শেষের দিকের অক্ষরগুলো চলক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- x,y,z ইত্যাদি। চলক আবার দুই ধরণের হয়ে থাকে। যথা- স্বাধীন চলক ও অধীন চলক। স্বাধীন চলক নিজে নিজে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু অধীন চলক অন্য চলক বা চলকসমূহের উপর নির্ভরশীল থাকে। আর স্বাধীন চলকের উপর অধীন চলকের নির্ভরশীলতার সম্পর্কই হলো অপেক্ষক।

অপেক্ষককে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়-

Y = f(x)

এখন চলুন চাহিদা অপেক্ষক কী সেই সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। আমরা জানি যে অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে কোনো দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণ তার নামের উপর নির্ভরশীল। তাই এখানে দাম হলো একটি স্বাধীন চলক আর চাহিদার পরিমাণ হলো অধীন চলক। সুতরাং সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, নামের উপর চাহিদার পরিমাণের নির্ভরশীলতার সম্পর্ককে বলা হয় চাহিদা অপেক্ষক। চাহিদা অপেক্ষককে নিম্নোক্ত ভাবে প্রকাশ করা যায় -

Q=f(P)

যেখানে, Qd = চাহিদার পরিমাণ এবং P = দ্রব্যের দাম

চাহিদা সমীকরণ কাকে বলে :-

চাহিদা অপেক্ষককে যখন কোনো সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তখন তাকে চাহিদা সমীকরণ বলে।

চাহিদা সূচি কাকে বলে :-

যে সূচিকে দামের পাশাপাশি চাহিদার পরিমাণকে উপস্থাপন করা হয় তাকে চাহিদা সূচি বলা হয়। চাহিদা সুচির বাম দিকে প্রব্যের মূল্য এবং ডান দিকে চাহিদার পরিমাণ দেখানো হয়।

আরও পড়ুনঃ যোগান কাকে বলে?

চাহিদার নির্ধারক কাকে বলে :-

যেসকল বিষয় বা উপাদানের উপর কোনো দ্রব্য বা সেবার চাহিদা নির্ভর করে তাদেরকে চাহিদার নির্ধারক বলে।

এই বিষয়গুলো কোনো ক্রেতা বা ভোক্তার কোনো দ্রব্যের চাহিদার পরিমাণের উপর সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আর এই বিষয়সমূহ বা নির্ধারকসমূহের ভিত্তিতে চাহিদা অপেক্ষক প্রকাশ করা যায়।

চাহিদা বিধি কাকে বলে :-

সাধারণত চাহিদা বিধি হলো দ্রব্যের দামের সাথে চাহিদার বিপরীতমূখী সম্পর্ক। আরও স্পষ্ট করে বললে, অন্যন্য অবস্থা যেমন, আয়, রুচি, অভ্যাস, সম্পর্কযুক্ত দ্রব্যের দাম, ক্রেতার সংখ্যা ইত্যাদি স্থির বা অপরিবর্তনীয় থেকে কোনো দ্রব্য বা সেবার দাম পরিবর্তন হলে তার চাহিদার পরিমাণের পরিবর্তন হয়। এক্ষেত্রে দাম বাড়লে চাহিদা কমে এবং দাম কমলে চাহিদা বাড়ে। দাম এবং চাহিদার এই বিপরীতমূখী সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলা হয়।

ধরা যাক একজন ক্রেতা ৫০ টাকা কেজিতে ১০ কেজি চাল ক্রয় করে। এখন যদি চালের দাম বেড়ে ৫৫ টাকা হয় তবে সে ৮ কেজি চাল ক্রয় করে। আবার যদি দাম কেজি প্রতি ৫ টাকা কমে ৪৫ টাকা হয় তবে সে ১২ কেজি ক্রয় করে।

এক্ষত্রে দামে পরিবর্তনে চাহিদার বিপরীতমূখী পরিবর্তন হয়েছে। দাম ও চাহিদার পরিমাণের এই বিপরীতমূখী সম্পর্কই হলো চাহিদা বিধি।

চাহিদা বিধির ব্যতিক্রম :-

চাহিদা বিধির কতকগুলো ব্যতিক্রম রয়েছে। নিচে এগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

১. উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বা জাকজমকপূর্ণ দ্রব্য :

কতকগুলো দ্রব্য আছে যেগুলো নিছক ভোগের জন্য ক্রয় করা হয় না, যেমন— মনি-মুক্তা, হীরক, দামি পাথর, উচ্চ মূল্যের অলংকার, মূল্যবান পোশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি পেলে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ফলে তাদের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। এসকল দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা বিধিটি সাধারণত কার্যকর হয়। না।

২. শেয়ার ও দ্রব্যের ফটকা বাজারে লেনদেন :

শেয়ার বাজারে দেখা যায় শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেলে তা আরও বৃদ্ধি পাবে এ আশায় ক্রেতারা অধিক সংখ্যক শেয়ার ক্রয় করে। সুতরাং চাহিদা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে কোন কোম্পানির শেয়ারের দাম হ্রাস পেতে থাকলে সাধারণত চাহিদা আরও হ্রাস পায়।

৩. রুচি ও অভ্যাসের পরিবর্তন :

মানুষের রুচি, পছন্দ, অভ্যাস প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটলে চাহিদা বিধিটি কার্যকরী হবে না। লোকের রুচির পরিবর্তনের ফলে রেডিও বা টেলিভিশনের চাহিদা বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি পেলেও চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
 
আরও পড়ুনঃ অর্থের চাহিদা কাকে বলে?

৪. পরিস্থিতি বা পরিবেশের পরিবর্তন :

পরিস্থিতি বা পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে চাহিদা বিধি কার্যকরী হয় না। যেমন, কলেরার প্রাদুর্ভাব হলে মাছের দাম যদি কমেও যায় তবু চাহিদা বাড়বে না।

৫. ভোগকারীর অজ্ঞতা :

কোন কোন দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও অজ্ঞতাবশত ক্রেতাগণ তাকে মূল্যবান মনে করে অধিক পরিমাণে ক্রয় করে এবং দাম কমলে ঐ দ্রব্য নিকৃষ্ট মনে করে কম ক্রয় করে। এক্ষেত্রেও চাহিদা বিধি কার্যকর হবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ