ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে? ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য?

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এমন এক অর্থব্যবস্থা যেখানে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে, উৎপাদন, বিনিময়, বন্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। এ অর্থব্যবস্থাকে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বলা হয়। এখানে বাজার ব্যবস্থা সরকারি হস্তক্ষেপ মুক্ত থাকে। এখানে চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়।

বর্তমানে বিশ্বে খাটি ধনতন্ত্র বা পুঁজিবাদ নেই তবে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে ধনতন্ত্র রয়েছে যদিও তা পুরোপুরি মাত্রায় নয়। অর্থাৎ সরকারের হস্তক্ষেপ সবদেশেই দেশের বৃহত্তর কল্যাণে বিদ্যমান।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কাকে বলে :-

যে অর্থব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে এবং বাজার ব্যবস্থা সরকারি হস্তক্ষেপযুক্ত থাকে, তাকে ধনতান্ত্রিক বা বাজার অর্থব্যবস্থা বলে।

এ ধরনের বাজার ব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম কোথায় বিনিয়োগ করবে, কি উৎপাদন বা বিক্রয় করবে, কি নামে দ্রব্য বা সেবা বিনিময় করবে- এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকে। অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দ্রব্য বা সেবার দাম বাজারে চাহিদা ও যোগান এর মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এখানে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

আরও পড়ুনঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে?

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :-

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে এগুলো বিশ্লেষণ করা হলো -

১. সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা :

ধনতন্ত্রে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে। এখানে উৎপাদনের উপাদান যেমন ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে। একজন ব্যক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন: স্বাধীন থাকে তেমনি ভোগের ক্ষেত্রেও স্বাধীন থাকে।

২. দাম ব্যবস্থা :

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দ্রব্য ও সেবার মূল্য নির্ধারিত হয় তাদের চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় মূল্য ব্যবস্থা বর্তমান থাকে। দ্রব্যমূল্য নির্ধারনের ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ থাকেনা বললেই চলে। তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে দেশের স্বার্থে নিয়ন্ত্রন করে।

৩. অবাধ প্রতিযোগিতা :

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে। এখানে ক্রেতা তার ইচ্ছামত দ্রব্য ভোগ করে থাকে। আবার বিক্রেতাও তার ইচ্ছামত দ্রব্য উৎপাদন করে থাকে।

৪. মুনাফা অর্জন :

পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রে উৎপাদনের উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন। পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে উৎপাদক সর্বনিম্ন ব্যয়ে উৎপাদন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের চেষ্টা করে। আর ভোক্তা চেষ্টা করে তার সীমিত আয় দ্বারা সর্বোচ্চ উপযোগ লাভ করতে।

৫. সামাজিক শ্রেণিবিভাগ :

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজে ধনী, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণি সৃষ্টি হয়। এর কারণ সম্পদের মালিকানা ব্যক্তিগত থাকায় মানুষ তার কর্ম ও যোগ্যতা অনুযায়ী সম্পদের মালিক হয়। আর তাই সমাজে বৈষম্য দেখা দেয়। এই অর্থব্যবস্থায় শ্রমিক শোষণের চিত্রও পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ অর্থনীতি কাকে বলে?

৬. সরকারি হস্তক্ষেপ মুক্ত :

এই অর্থব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে না। দেশে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগ নির্ধারিত হয় এবং মজুরি নির্ধারিত হয় শ্রমিকের চাহিদা ও যোগানের সমতার মাধ্যমে। অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য নির্ধারনের পাশাপাশি মজুরি নির্ধারনের ক্ষেত্রেও সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে না। তবে বিশেষক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে যোগানের মাত্রা বৃদ্ধি করে সহায়তা করে।

৭. অসম বণ্টন :

ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ বন্টনে অসমতা বা বৈষম্য দেখা যায়। সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা থাকায় সম্পদের বন্টন অসম হয়। এক্ষেত্রে যার সম্পদ যত বেশি তার আয় তত বেশি।

৮. ভোক্তার স্বাধীনতা :

এখানে প্রত্যেকের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিদ্যমান। কি, কখন এবং কিভাবে উৎপাদন করা হবে সম্পদের মালিক সে সিদ্ধান্ত নেয়।

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্থব্যবস্থা যেখানে প্রত্যেকটি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যক্তিগত মালিকানা ও স্বাধীনতা থাকার পাশাপাশি সরকারি নিয়ন্ত্রন অনুপস্থিত থাকে। তবে বাজার ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা ও সহযোগিতা করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ