প্রুফ সংশোধন কাকে বলে | প্রুফ সংশোধন উদাহরণ, নিয়মাবলী, প্রয়োজনীয়তা কি

প্রুফ সংশোধন :-

প্রুফ রিডিং এর আভিধানিক অর্থ হল ‘প্রুফ সংশোধন' (proof songsodhon)। তবে ‘প্রুফ সংশোধন' শব্দবন্ধের ব্যবহার নেই তাই সার্বজনীন ভাবে একে প্রুফ রিডিং বলা হয়।

প্রুফ সংশোধন কাকে বলে বা কি :-

সংবাদপত্র, পত্রিকা, বই বা এ জাতীয় মুদ্রণ প্রকাশনার ক্ষেত্রে ছাপার আগে কম্পোজিং এ কোন ভুল ভ্রান্তি আছে কিনা যাচাই করে, বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে, নির্ধারিত প্রুফ রিডিং সংকেত ব্যবহার করে যে কোনো প্রকার ভুলের সংশোধনের নাম হল প্রুফ রিডিং বা প্রুফ সংশোধন। এখন অবশ্য বিভিন্ন সফটওয়ার এই ভুল সংশোধনে সহায়তা করে।

প্রুফ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা কি :-

যে কোন প্রকাশনার ক্ষেত্রেই প্রুফ সংশোধন আবশ্যিক । ভুল বানান বা এই জাতীয় অন্য কোন ভুল ভ্রান্তি পাঠকের কাছে সেই প্রকাশনার বিশ্বাসযোগ্যতাকে বিনষ্ঠ করে ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও ওঠে। 


পাঠকের কাছে ভুল বার্তা তুলে ধরে একই সাথে নবীন পাঠকদের কাছে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তাই ভুল প্রকাশনা মানেই পাঠকের ক্ষতির সাথে সাথে প্রকাশনার বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতিও বটে। 

এই সকল বিষয়কে মাথায় রেখে বলা যেতেই পারে যে প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রুফ রিডিং একটি অত্যাবশ্যক পর্যায়।

এছাড়াও প্রুফ সংশোধনের নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করা যায় :

১. ত্রুটি পরিষ্কারকরণ:

যে কোন প্রকাশনায় বানান, ব্যবহার, ব্যাকরণ ইত্যাদি সহজেই ভুল থাকতে পারে। প্রুফ রিডিং-এর মাধ্যমে এসব ত্রুটি সনাক্ত করে পরিষ্কার করা হয়।

২. মিথ্যা তথ্য সংশোধন:

কোন তথ্য ভুল, অসম্পূর্ণ বা অতিরঞ্জিত হলে তা সংশোধন করে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা হয়।

৩. বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি:

সংশোধিত প্রুফ পাঠকদের মধ্যে প্রকাশনার প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে। ফলে প্রকাশনার গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।

৪. গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়: 

নির্ভুল প্রকাশনা পাঠকের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয় এবং মানসম্পন্ন হিসেবে পরিগণিত হয়।

সংক্ষেপে, প্রুফ সংশোধন ছাড়া কোন প্রকাশনা পূর্ণাঙ্গ বা নির্ভুল হতে পারে না। এটি প্রয়োজনীয় একটি ধাপ।

প্রুফ সংশোধন বৈশিষ্ট্য :-

প্রুফ সংশোধনের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হয়:

১. বানান যাচাই ও সংশোধন একটি প্রধান দায়িত্ব। বাংলা বানান সম্পর্কে নকশা থাকা।

২. বাক্য রচনার ওপর নজর দেয়া। কাজের বাক্য সোজা, স্পষ্ট ও বুঝতে সহজ হয়।

৩. প্রাণত্যজক সঙ্কেত যথাযথ করা। ফুলস্টপ, কমা, ডট, ইত্যাদির যথাযথভাবে ব্যবহার।

৪. স্পেসিং এবং এলাইনমেন্ট ঠিক থাকা। স্থান প্রয়োজনের থেকে অতি-বেশি বা অতি-কম না হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

৫. তথ্যের সত্যতা ও নির্ভুলতা যাচাই করা। অতিরঞ্জন এড়িয়ে যাওয়া।

৬. লেখার ধরন সম্পর্কে সচেতন থাকা। হেডিং, সাবহেডিং ইত্যাদি যথাযথ করা।

৭. কাজের অংশগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা। ফ্লো এবং লজিক্যাল অর্ডার ঠিক রাখা।

৮.সাজানোর মান ঠিক থাকা। ফন্ট, রং, ছবি ইত্যাদি সাজানো যথাযথ।

প্রুফ সংশোধনের উদাহরণ :-

নীচে প্রুফ সংশোধন উদাহরণ দেওয়া হলো

প্রুফ সংশোধনের উদাহরণ

প্রুফ রিডার কি :-


প্রুফ রিডিং বা প্রুফ সংশোধনের এই কাজটি যিনি করেন তিনি হলেন প্রুফ রিডার। প্রুফ রিডার হতে গেলে কতকগুলি অতিআবশ্যিক গুনাগুণ থাকতে হয়। যেমন

১ - পেশাগত জ্ঞান।
২ - ব্যকরণের উপর বিশেষ দক্ষতা।
৩ - ভাষার উপর দক্ষতা ( যে ভাষায় তিনি প্রুফ রিডিং করবেন)
৪ - বানান সম্পর্কে অতি সচেতন।
৫ - সম্পাদনার জ্ঞান।
৬ - বাক্য সংগঠনের জ্ঞান।

আধুনিক সম্পাদনায় প্রুফ রিডিং :-

এক সময়ে প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে এক বা একাধিক প্রুফ রিডার থাকতেন। তারা সংবাদপত্র ছেপে বেরোনোর আগে ভুল ত্রুটি সংশোধন করে মুদ্রণের জন্যে পাঠাতেন।

কিন্তু বৰ্তমানে উন্নত প্রযুক্তিতে (কম্পিউটার) পান্ডুলিপি সংশোধন বা প্রুফ রিডিং বলে আলাদা করে কিছু করা হয় না সংবাদপত্র অফিস গুলিতে। 

খবরের আধিক্য এবং কম্পিটিশনের কারণে এখন সংবাদপত্র অফিসগুলিতে যিনি রির্পোটার তিনিই সংবাদ লেখক আবার তিনিই নিজের লেখা কপির প্রুফ রিডার। 

কারণ কম্পিউটারে বসে তার নিজের কপি নিজেই টাইপ করে পাঠিয়ে দিতে হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। তাই এখন কোনো সংবাদপত্র অফিসেই আলাদা করে কোনো প্রুফ রিডারকে খুঁজে পাওয়া যায় না। 

কিন্তু সংবাদপত্র ছাড়া অন্যান্য পুস্তক, পুস্তিকা বা বই এর ক্ষেত্রে প্রুফ রিডিং এখনও অত্যাবশ্যক।

প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলী :-

১৮৫৮ সালের ১২ই জুলাই ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিটিউট, যার বর্তমান নাম বিউরো অফ ইন্ডিয়া স্ট্যানডার্ডস (Bureau of Indian Standards) আলোচনা এবং বিতর্কের মাধ্যমে প্রুফ সংশোধনের নিয়মাবলীর কথা বলেছে। 

মূলত এই নির্দিষ্ট নিয়ম ক্ষেত্রেই প্রকাশক, মুদ্রক, লেখকরা প্রুফ সংশোধন করে থাকেন। অবশ্য নিজেদের প্রয়োজনে একটুখানি অদল বদল ঘটালে অন্য কথা। 

মুদ্রণ পদ্ধতির বদল ঘটলেও প্রুফ সংশোধনের চিহ্ণের পরিবর্তন কিন্তু হয়নি। BIS নিয়মানুসারে প্রুফ সংশোধনের ভাগগুলি হল-

১ - সাধারণ (General)
  • সঠিক বানান ও ব্যাকরণ পরীক্ষা করা।
  • তথ্যগুলো সঠিক ও নির্ভুল কিনা যাচাই করা।
  • অপ্রয়োজনীয় বা ভুল তথ্য পরিষ্কার করা।

২ - যতিচিহ্ন (Punctuation)
  • ঠিক স্থানে ফুলস্টপ, কমা, উদ্ধৃতি চিহ্ন ইত্যাদি ব্যবহার করা।
  • যতিচিহ্নের সাথে স্পেসিংয়ের নিয়মাবলী মিলিয়ে নেওয়া।

৩ - স্থানের কমানো বাড়ানো (Spacing)
  • শব্দের পর স্পেস দেওয়া।
  • বাক্যের শেষে ফুলস্টপ দেওয়া।
  • প্যারাগ্রাফের মাঝে ডবল স্পেস দেওয়া।

৪ - সমতা (Alignment )
  • ডান পাশ সমতা বা ব্লক সমতা বজায় রাখা।
  • কোন লাইনের শুরু ও শেষ সমান করে রাখা।

৫ - হরফ (Type)
  • সব হেডিং bold করে বড় হরফে লেখা।
  • সাধারণ লেখার জন্য plain হরফ ব্যবহার করা।

এইসব নিয়মাবলী মেনে সম্পূর্ণ প্রুফ সংশোধন করা সম্ভব।

প্রুফ রিডারের কাজ :-

১ - ভুল যতি-চিহ্ন, অথবা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যতি-চিহ্ন যদি বাদ পড়ে যায়।

২ - ভুল বানান । বাংলা বানানের ক্ষেত্রে আর একটি বড় করে দেখার বিষয় হল ঐক্যবদ্ধ বানান (Uniformed spelling) একই বইতে একই বানান নানাভাবে লেখা উচিত নয়।

৩ - উলটে যাওয়া অক্ষর অযথা অপ্রয়োজনীয় / অতিরিক্ত কোন অক্ষর।

৪ - একটি শব্দের বিভিন্ন অক্ষরের মধ্যে ফাঁক থাকা বা দুটি শব্দের মধ্যে প্রয়োজনীয় ফাঁক না থাকা বা অতিমাত্রায় ফাঁক থাকা।

৫ - মূল লেখার কিছু অংশ বাদ যাওয়া।

৬ - এক রকম টেইপের সঙ্গে অন্য রকম টাইপ মিশে যাওয়া বা একপয়েন্টের টাইপের মধ্যে অন্য পয়েন্টের টাইপ আসা, একে বলে Wrong fount সংক্ষেপে wf।

৭ - তারিখ ও সালের গোলামাল।

৮ - একই শব্দ বা বাক্য দুবার কমপোজ হওয়া।

৯ - ইংরাজী টাইপের ক্ষেত্রে ক্যাপিটালের বদলে স্মল ও স্মলের বদলে ক্যাপিটাল।

১০ - প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইটালিক শব্দ না বসানো।

১১ - প্যারাগ্রাফ না ভেঙে দীর্ঘ প্যারাগ্রাফ করা।

১২ - পাতার ভুল নম্বর বসানো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

Please do not enter any spam link in the comment box.