কমেডির উৎপত্তি :-
কমেডি (Comedy) শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ 'Komoidia' থেকে। এই শব্দ থেকে লাতিন 'Comoedia' এবং এখান থেকে 'Comedy'এসেছে।'Komoidia' শব্দের আদি অর্থ হাসিতে সমাপ্ত নাটক অর্থাৎ মিলনান্ত নাটক । 'Kome' ও 'Oide' শব্দের সংযোগ সৃষ্টি 'Komoidia'।
'Kome'-র অর্থ গ্রাম (Village) এবং 'Oide' এর অর্থ গান গাওয়া (Singing)। অর্থাৎ কমেডি মানে গ্রাম্য ভোজন উৎসবের আনন্দ গান অথবা একে বলা যেতে পারে জনপ্রিয় নাট্যকলা।
গ্রীক দেবতা ডায়োনিসাসের পুজো উপলক্ষ্যে শীতকালীন যে উৎসব হত সেখান থেকে কমেডির উদ্ভব। ডায়োনিসাসের মৃত্যু উপলক্ষ্যে ট্র্যাজেডি ও পুনর্জন্ম উপলক্ষে কমেডির সৃষ্টি।
এই আনন্দানুষ্ঠানে ফ্যালিক গান (Phallic Song) গাওয়া হত। গান - বাজনা সহকারে শোভাযাত্রার নাম ‘কোমাস (Comus)। কোমাস থেকেই কমেডির উৎপত্তি।
কমেডি নাটক কাকে বলে :-
কমেডি হচ্ছে মিলানন্তক নাটক।এককথায় কমেডি নাটক কাকে বলে তা বলতে বোঝায়, যে নাটক দর্শককে আনন্দ দেয় তাই কমেডি নাটক।
আরও পড়ুন :- মহাকাব্য কি ও কয়টি?
এম. এইচ. আব্রামস্ ও জি. জি. হারফাম তাঁদের 'A Handbook of Literary Terms' এ কমেডির সংজ্ঞা হিসাবে বলেছেন -
"a comedy is a fictional work in which the materials are selected and managed primarily in order to interest and amuse us the characters and their discomfiture engage our pleasurable attention rather than our profound concern, we are made to feel confident that no great disaster will occur, and usually the action turns ant happily for the chief character. The term "Comedy" is customarily applied only to plays for the stage or motion pictures."
কমেডি কি? এ সম্পর্কে অ্যারিস্টটল এ বিষয়ে বলেছেন -
"Comedy is an imitation of man worse than the average worse however not as regards any and every sort of fault but only as regards particular kind.............. The ridiculous may be defined as a mistake or deformity not productive of pain or harm to others."
কমেডি নাটকের প্রকারভেদ বা শ্রেণীবিভাগ :-
নাট্যতত্ত্ববিদরা কমেডিকে কয়েকটি প্রকারভেদে বাশ্রেণীতে ভাগ করেছেন যথা -১ - রোমান্টিক কমেডি বা কমেডি অব রোমান্স,
২ - কমেডি অব হিউমার,
৩ - স্যাটায়রিক্যাল কমেডি,
৪ - কমেডি অব ম্যানারস,
৫ - কমেডি আব ইনট্রিগ বা ষড়যন্ত্র মূলক কমেডি,
৬ - ফার্স বা প্রহসন কমেডি,
৭ - ব্ল্যাক কমেডি,
৮ - জেন্টন কমেডি।
রোমান্টিক কমেডি বা কমেডি অব রোমান্স (Comedy of Romance) :
যে কমেডির মধ্যে থাকে রোমান্স অর্থাৎ কল্পনার উচ্ছ্বাস তাকে রোমান্টিক কমেডি বলা যায়।
আরও পড়ুন :- উপন্যাস কি ও কয়টি?
কমেডি অব হিউমার (Comedy of Humour) :
হিউমার মানে নির্ভেজাল হাস্যরস। এই জাতীয় কমেডিতে বিশুদ্ধ হাস্যরস ব্যবহৃত হয়। একটি আবেগপ্রবা প্রেক্ষাপট সৃজন করা হয়।
বেন জনসনের 'এভরিম্যান ইন হিজ হিউমার' ও 'এভরিম্যান আউট অব হিজ হিউমার, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের “কিঞ্চিৎ জলযোগ”, রবীন্দ্রনাথের 'বৈকুণ্ঠের খাতা'- এই শ্রেণীর কমেডির উদাহরণ।
স্যাটায়রিক্যাল কমেডি বা কমেডি অব স্যাটায়ার (Comedy of Satire):
এই শ্রেণীর কমেডিতে প্রকাশিত হয় সামাজিক অপরাধ এবং অপ্রাপ্তির কথা। এই অপরাধ সেই সব মানুষের যারা তাদের শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করেন। বলা যেতে পারে নাট্যকার বিদ্রূপের কশাঘাত চালান।
এই ধরণের কমেডির উদাহরণ বেন জনসনের 'ভোলপোন' (volpone) বা 'সেরিডান স্কুল ফর স্ক্যান্ডাল'; অ্যারিস্টো ফেনিস এর ‘ক্লাউড’ ও ‘বাউস', মধুসূদন দত্তের 'একেই বলে সভ্যতা' ইত্যাদি।
কমেডি অব ম্যানারস (Comedy of Manners) :
সামাজিক রীতিনীতি আচার-আচরণ প্রভৃতি যে কমেডির বিষয়বস্তু তাকে কমেডি অব ম্যানারস বলে। এখানে থাকে উইট বা বাগবৈদগ্ধ।
এই জাতীয় কমেডি শেক্সপীয়রের 'লাভস লাব লস্ট’, বার্নাড শ-এর 'আর্মস অ্যান্ড দি ম্যান', দীনব ‘বিয়ে পাগলে বুড়ো”, অমৃতলাল বসুর 'কৃপণের ধণ", রবিন্দ্রনাথের 'শেষরক্ষা' ইত্যাদি।
কমেডি অব ইনট্রিগ বা ষড়যন্ত্রমূলক কমেডি (Comedy of Intrigue):
ষড়যন্ত্রের জাল, জটিলতা ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয় কমেডি অব ইনট্রিপে। প্রধান চরিত্র এই ষড়যন্ত্রের শিকার হলেও শেষপর্যন্ত সমস্ত জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসে।
আরও পড়ুন :- বাংলা নাটকের বৈশিষ্ট্য লেখ?
এই শ্রেণীর রচনা ড্রাইডেনের 'দ্যা স্প্যানিশ ফেয়ার', অমৃতলাল বসুর 'রূপান্নবর্ধনা' রবীন্দ্রনাথের 'বৈকণ্ঠেরখানা' ইত্যাদি।
ফার্স (Erace):
ফার্স এর বাংলা প্রহসন। সমাজ চরিত্রের ভন্ডামী অসংগতি যে নাটকে প্রকাশিত হয় তাকে ফার্স বলা হয়। এই অসংগতি ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপসহ ব্যক্ত হয়। এটি লঘুস্তরের কমেডি।
ফার্সের উদাহরণ শেক্সীপীয়রের 'কমেডি অব এররস’ ও ‘হেনরি কোর’; মধুসূদন দত্তের 'একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’; দীনবন্ধু মিত্রের 'সধবার একাদশী' ইত্যাদি।
ব্ল্যাক কমেডি (Black Comedy) :
যে কমেডিতে অসূয়া (Cynicism) ও মোহমুক্তি (Disillusionment) প্রতিফলিত তাকে ব্ল্যাক কমেডি বলে। মানব চরিত্র অজানা শত্রুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। এই অবস্থাটাই জীবনের অসংগতিরূপে প্রকাশিত। তবে এ কমেডি মূলত ফরাসী দেখা মেলে। এগুলিতে অ্যাবসার্ড ভাবনা রয়েছে।
যেমন আয়েনেস্কোর লা চেয়ার বাজেনের ‘রাইনো', মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের 'রাজরক্তা, বাদল সরকারের 'বাকি ইতিহাস'।
জেন্টন কমেডি :
এছাড়া কেউ কেউ জেন্টল কমেডি বা ক্ল্যাসিক্যাল কমেডি-র কথাও বলেছেন। জেন্টল কমেডির বিষয় চরিত্রের নৈতিকতা। ক্ল্যাসিক্যাল কমেডি মূলত অ্যারিস্টটলীয় ধ্রুপদীরা প্রাচীন কমেডি।
বাংলা কমেডি নাটকের বৈশিষ্ট্য :-
কমেডির বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো -
২ - অ্যারিস্টটলের মতে কোন জীবন আদর্শ নয়, সামাজিক বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন লেখা পরিবেশিত হয়েছে কমেডিতে।
৩ - কমেডির প্রধান রস হাসারস। তবে হাস্যরসে অশ্লীল বা ভাঁড়ামি নয়। বরং সেখানে জীবনের অসংগতি প্রকাশিত।
৪ - কমেডি কোনো জটিলতাকে ব্যক্ত করে না, বরং জীবনের উপরিতলশায়ী ভাব প্রকাশিত হয়।
৫ - কমেডি মানুষকে আনন্দ দান করে। ফলে গুরুগম্ভীর ভাব নয়, মিলন প্রীতির ছবি দেখা যায়।
৬ - কমেডিতে অনেক চরিত্রের সমাবেশ হয়।
3 মন্তব্যসমূহ
আমাদের এই ভাবে সাহায্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ.😘
উত্তরমুছুনThank u
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ এতে খুব সহজ করেই আছে ❤️
উত্তরমুছুনPlease do not enter any spam link in the comment box.