গ.সা.গু কাকে বলে? গ.সা.গু নির্ণয় পদ্ধতি? গ.সা.গু এর পূর্ণরূপ কি?

গ.সা.গু এর পূর্ণরূপ কি?

গ.সা.গু এর পূর্ণরূপ হলো গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক সংক্ষেপে হল গ.সা.গু (ইংরেজিতে বলে হায়েস্ট কমন ফ্যাক্টর, বা H.C.F.)।

যেকোনও সংখ্যার গুণনীয়ক কাকে বলে ও সেগুলো বার করা আগে শিখেছি। একাধিক সংখ্যার গুণনীয়কগুলো বার করলে আমরা হয়ত দেখব কয়েকটা গুণনীয়ক সবকটা সংখ্যার ক্ষেত্রেই আছে। এগুলোকে বলব এই সংখ্যাগুলোর সাধারণ (ইংরেজিতে কমন) গুণনীয়ক।

আর গরিষ্ঠ কথাটার মানে হল সবচেয়ে বড়। দুইটি সংখ্যা ভাবা যাক, 18, 24.

18 সংখ্যাটির গুণনীয়ক বা উৎপাদকগুলি হল, 1, 2, 3, 6, 9, 18
24 সংখ্যাটির গুণনীয়ক বা উৎপাদকগুলি হল, 1, 2, 3, 4, 6, 8, 12, 24

এই দুইটি সংখ্যার গুণনীয়কগুলিতেই আছে, 1, 2, 3, 6। সুতরাং, এইগুলি হল এই দুইটি সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়ক। এদের মধ্যে 6 হল সবচেয়ে বড় (গরিষ্ঠ)। তাই 6 হল 18 ও 24 সংখ্যা দুটির গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (গসাগু)। এখন প্রশ্ন হলো গ.সা.গু কাকে বলে তা আলোচনা করা।

গ.সা.গু কাকে বলে?

একাধিক সংখ্যার গুণনীয়কগুলির তুলনা করে যে সাধারণ গুণনীয়কগুলি পাওয়া যায় (অর্থাৎ, সবকটি সংখ্যারই গুণনীয়ক হিসাবে যে সংখ্যাগুলি পাই) তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টিকে গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বা গ.সা.গু বলা হয়।

আরও পড়ুনঃ ল.সা.গু কাকে বলে?

গ.সা.গু নির্ণয় পদ্ধতি :-

গসাগু নির্ণয় করার তিনটি পদ্ধতি! একাধিক সংখ্যার গসাগু তিন ভাবে গসাগু নির্ণয় বা বার করা যায়।

প্রথম পদ্ধতি:

গুণনীয়কগুলি বার করা সংখ্যাগুলির সবকটি গুণনীয়ক বার করে তুলনা করে দেখো কোনগুলি সাধারণ গুণনীয়ক।

সেইগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হল সংখ্যাগুলির গসাগু।

উদাহরণ: 24 ও 36 সংখ্যা দুটির গসাগু নির্ণয় করো।

24-এর গুণনীয়কগুলি হল 1.2.3.4.6.8.12.24
36-এর গুণনীয়কগুলি হল 1,2,3,4,6,9, 12, 18, 36

দুটি সংখ্যার এই গুণনীয়কগুলির মধ্যে যেগুলি সাধারণ গুণনীয়ক, অর্থাৎ, যে সংখ্যাগুলি 24-এর গুণনীয়ক, আবার 36-এরও গুণনীয়ক, সেগুলি হল এই দুটি সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়ক। এইগুলির তলায় দাগ দাও। এবার দেখো এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কোনটি। এখানে সবচেয়ে বড় সাধারণ গুণনীয়ক হল 12। তাই 24 ও 36-এর গসাগু হল 12।

দ্বিতীয় পদ্ধতি:

মৌলিক গুণনীয়কগুলি দিয়ে গসাগু বার করা সংখ্যাগুলির সবগুলি মৌলিক গুণনীয়ক বার করে তুলনা করে দেখো কোনগুলি সাধারণ মৌলিক গুণনীয়ক।

এবারে দেখো এই সাধারণ মৌলিক গুণনীয়কগুলি সরকটা সংখ্যাতেই কম করে (ন্যূনতম) কতবার আছে। এই সাধারণ মৌলিক গুণনীয়কগুলি নিয়ে তাদের এই ন্যূনতম বার গুণ করলে আমরা সংখ্যাগুলির গসাগু পাব।

আরও পড়ুনঃ ভগ্নাংশ কাকে বলে?

উদাহরণ:

মৌলিক গুণনীয়ক দিয়ে 12 ও 16-র গসাগু নির্ণয় আগে আমরা সংখ্যা দুটির মৌলিক গুণনীয়কগুলি বার করব।

12-র মৌলিক গুণনীয়কগুলি হল 2.2.3
16-র মৌলিক গুণনীয়কগুলি হল 2.2.2.2

12 ও 16-র সাধারণ মৌলিক গুণনীয়ক পেলাম একটাই, 2। 12-তে এটি 2 বার ও 16-তে এটি 4 বার আছে। তাই এই সাধারণ মৌলিক সংখ্যাটিকে আমরা ন্যূনতম 2 বার পাচ্ছি। সুতরাং 12 ও 16-র গসাগু হল 2x2 বা 4।

সহজ পদ্ধতি:

এই পদ্ধতিটিকে আমরা একটু সহজ করে নিতে পারি। যেহেতু আমাদের প্রয়োজন হল সংখ্যাগুলির সাধারণ মৌলিক গুণনীয়কগুলি বার করা, ও দেখা যে ন্যূনতম কতবার এই গুণনীয়কগুলি সবকটি সংখ্যাতেই আছে, তাই আমরা একযোগে সবকটি সংখ্যার মৌলিক গুণনীয়কগুলি বার করব।

এর উপায় হল, আমরা সবকটি সংখ্যাকেই ভাগ করা যায় এমন সবচেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যাটি নিয়ে শুরু করে বারবার ভাগ করে যাব, যতক্ষণ সবকটিকে ভাগ করা যায় এমন মৌলিক সংখ্যা পাব। যতগুলি মৌলিক সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা গেল, সেইগুলির গুণফল হবে সংখ্যাগুলির গসাগু ।

উদাহরণ: মৌলিক গুণনীয়ক দিয়ে 48, 72 ও 96-এর গসাগু নির্ণয় করো

সুতরাং, 48, 72 ও 96-এর গসাগু হল 2 x 2 x 2 x 3 = 24

তৃতীয় পদ্ধতি:

সংখ্যাগুলি ভাগ (বিভাজন) করে গসাগু বার করা। যে সংখ্যাগুলির গসাগু বার করতে হবে সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে ছোট সংখ্যাটি দিয়ে পরের সংখ্যাটিকে ভাগ করো।

ভাগশেষ কিছু না থাকলে ছোট সংখ্যাটিই হল এই দুটি সংখ্যার গসাগু। ভাগশেষ থাকলে, ভাগশেষকে ভাজক ধরে নিয়ে এবার ছোট সংখ্যাটিকে (ভাজ্য হিসাবে নিয়ে) ভাগ করো। এবারেও ভাগশেষ থাকলে বোঝা যাবে যে, এই দুটি সংখ্যার গসাগু হল 1, আর ভাগশেষ 0 হলে বোঝা যাবে শেষ ভাজকটিই হল এই দুটি সংখ্যার গসাগু।

গসাগু নির্ণয়ে তৃতীয় একটি সংখ্যা থাকলে তাকে এরপর প্রথম দুটি সংখ্যার গসাগু দিয়ে ভাগ করতে হবে একই ভাবে। শেষ ভাজকটি, যা দিয়ে ভাগ করে ভাগশেষ 0 আসবে সেটিই হবে তিনটি সংখ্যার গসাগু । ভাগশেষ 0 না আসলে বোঝা যাবে তিনটি সংখ্যার গসাগু হল। আরো সংখ্যা থাকলে এই ভাবে প্রক্রিয়াটি করে যেতে হবে।

উদাহরণ 1: ভাগ করে 48, 72 ও 108-এর গসাগু বার করো

সুতরাং, 48, 72 ও 108 র গসাগু হল 12

উদাহরণ 2: ভাগ করে 16, 24 ও 32-এর গসাগু বার করো

সুতরাং, 16, 24 ও 32-এর গসাগু হল 8 ।

গ.সা.গু এর বৈশিষ্ট্য :-

গ.সা.গু বা HCF এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

1. দুটি বা ততোধিক সমসংখ্যার সর্ববৃহৎ সাধারণ গুণনীয়ককে গ.সা.গু বলা হয়।

2. যে সংখ্যা দুটি বা ততোধিক সংখ্যাকে অবশ্যই ভাগ করে, সেটি হল তাদের গ.সা.গু।

3. দুটি সংখ্যার গ.সা.গু হল সংখ্যাগুলির মধ্যে যে সবচেয়ে বড় সাধারণ গুণনীয়ক।

4. দুটি পরস্পর অসাধারণ সংখ্যার গ.সা.গু হল 1।

5. দুটি সমসংখ্যার গ.সা.গু হল সংখ্যাগুলির মধ্যে যে ছোট সংখ্যা।

6. গ.সা.গু খুঁজার জন্য ইউক্লিড অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়।

এভাবে গ.সা.গু দুটি বা ততোধিক সংখ্যার সর্ববৃহৎ সাধারণ গুণনীয়ক যা সংখ্যাগুলিকে অবশ্যই ভাগ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ