গুণিতক কাকে বলে? গুণিতকের বৈশিষ্ট্য?

কোনও সংখ্যাকে এক একটা সংখ্যা (অখন্ড সংখ্যা) দিয়ে গুণ করে গেলে যে সংখ্যাগুলি পাই, সেগুলি হল সংখ্যাটির গুণিতক। বিভিন্ন সংখ্যার নামতার কথা মনে করো। একটি সংখ্যার নামতায় আমরা সেই সংখ্যার প্রথম কয়েকটি গুণিতক পাই—যেমন,
  • 2-এর গুণিতক হল, 2, 4, 6, 8, 10, 12, 14,
  • 3 -এর গুণিতক হল, 3, 6, 9, 12, 15, 18, 21,

যেকোনও সংখ্যার গুণিতক অসংখ্য, যার কোনও শেষ নেই। তাই কোনও সংখ্যারই সবচেয়ে বড় বা বৃহত্তম গুণিতক বলে কিছু হয় না;

যেকোনও সংখ্যার সবচেয়ে ছোট বা লঘিষ্ঠ গুণিতক হল সংখ্যাটি নিজেই, কারণ 1 দিয়ে গুণ করলে আমরা সেই সংখ্যাটিকেই পাই। অন্যান্য সব গুণিতক সেই সংখ্যাটির থেকে বড় হবে; প্রত্যেকটি সংখ্যাই হল ০ -এর গুণিতক।

গুণিতক কাকে বলে :-

একটি সংখ্যা দ্বারা অপর একটি সংখ্যা নিঃশেষে বিভাজ্য হলে, প্রথম সংখ্যাটিকে দ্বিতীয় সংখ্যাটির গুনিতক বলে।

অর্থাৎ গুনফল হল গুনিতক। ০ হল সব সংখ্যার গুনিতক।

অর্থাৎ যে সংখ্যার দ্বারা অন্য একটি সংখ্যাকে ভাগ করা যায় সেটিকে গুনীতক বলে।

আরও পড়ুনঃ ভগ্নাংশ কাকে বলে?

এমন কতগুলি সংখ্যা বলুন ৫ দ্বারা যাদের ভাগ করা যায়, কোন অবশেষ থাকে না। যেমন ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০ । লক্ষ্য করুন এ ধরনের সংখ্যার প্রথমটি ৫ কিন্তু তার পর এদের কোন শেষ নাই। অসীম পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। আপনি ৭ এবং ৯ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা গুলো লিখুন তো
  • ৭ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা = ?
  • ৯ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা = ?
গুণিতক কাকে বলে
দেখলেন তো এদের শেষ নাই। এদের বলা হয় গুণিতক। অর্থাৎ ৫ এর গুণিতক = ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩৫, ৪০, ৪৫.... ৭০ ইত্যাদি

৭ এর গুণিতক = ৭, ১৪, ২১, ২১, ২৮, ৩৫, ৪২, ৪৯, ৬৩, ৭০ ইত্যাদি।

একটি সংখ্যার গুণিতক অসংখ্য হলেও সব চাইতে ছোট একটি সংখ্যা আছে। সে সংখ্যাটি অবশ্য সংখ্যাটি নিজেই। অর্থাৎ ৫ এর সর্ব লঘিষ্ঠ গুনিতক ৫, ৭ এর সর্ব লঘিষ্ঠ গুনিতক ৭। অতএব ৯ এর সর্ব লঘিষ্ঠ গুনিতক হবে— (নিজে উত্তর দিন)।

এবার দেখুন এমন একটি গুণিতক ৭ এর এবং ৫ এর উভয়ের মধ্যেই আছে। হ্যাঁ এটি ৩৫। না এটাই শেষ নয় এর পর দেখা যাবে পরবর্তী সাধারণ গুণিতক ৭০ তার পর ১০৫ তার পর ১৪০ এভাবে চলতেই থাকবে। শেষ পাবেন না, পাওয়া যায় না।

কিছু একটা ব্যাপারে শেষ পাওয়া যা তা হল, যদি বলি সাধারণ অথচ সর্ব লঘিষ্ঠ (ছোট) গুণিতক কোনটি? উত্তর হবে ৩৫। অর্থাৎ ৫ এবং ৭ এর লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক ৩৫। সংক্ষেপে ল.সা.গু ৩৫।

আশা করি গুণিতক কি বা কাকে বলে তা স্পর্শ ভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি।

সাধারণ গুণিতক কাকে বলে :-

দুই বা ততোধিক সংখ্যার গুণিতকগুলোর মধ্যে যে গুণিতকগুলো প্রত্যেকের সাথে মিল পাওয়া যায় সেগুলোকে সাধারণ গুণিতক বলা হয়।
  • ২ = ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮, ২০.....
  • ৪ = ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০, ২৪, ২৮, ৩২.....

আরও পড়ুনঃ
 গুননীয়ক কাকে বলে?

উপরের উদাহরণে, ২ এবং ৪ এর গুণিতকগুলোর মধ্যে ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০ প্রত্যেকের সাথে মিলে।

তাই, ২ এবং ৪ এর সাধারণ গুণিতক হল: ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০.

অর্থাৎ, ২ এবং ৪ এর যে গুণিতকগুলো উভয়ের মিলে সেগুলোই তাদের সাধারণ গুণিতক।

আশা করি এই উদাহরণ দিয়ে সাধারণ গুণিতকের ধারণাটি আরও স্পষ্ট হয়েছে।

সাধারণ গুণিতক সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:
  • - দুইটি বা ততোধিক সংখ্যার সর্বোচ্চ সাধারণ গুণিতক হল সেগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন সংখ্যা।
  • - দুইটি পরস্পর প্রাইম সংখ্যার কোন সাধারণ গুণিতক থাকে না।
  • - দুইটি সংখ্যার সাধারণ গুণিতক খুঁজতে তাদের গুণিতকগুলোর মধ্যে যেগুলো প্রত্যেকের সাথে মিলে তা খুঁজতে হয়।
  • - তিনটি বা ততোধিক সংখ্যার সাধারণ গুণিতক পাওয়ার জন্য প্রত্যেক সংখ্যার জোড়া জোড়া করে সাধারণ গুণিতক খোঁজা হয়।
  • - দুইটি সংখ্যার একাধিক সাধারণ গুণিতক থাকতে পারে।

লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক কাকে বলে :-

দুই বা ততোধিক সংখ্যার সাধারণ গুণিতকগুলোর মধ্যে যে সংখ্যা সবচেয়ে ছোট, সেটিকে লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বা লসাগু বা LCM বলে।

যেমন-
  • ২ = ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮, ২০.....
  • ৪ = ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০, ২৪, ২৮, ৩২.....

এখানে ২ এবং ৪ এর মধ্যে সাধারণ গুণিতক হলো ৪, ৮, ১২, ১৬, ২০। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ৪। তাই ২ এবং ৪ এর লসাগু ৪ কারণ এটি ২ এবং ৪ উভয়ের গুণিতক।

আবার অন্য একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক-
  • ৬= ৬, ১২, ১৮, ২৪, ৩০, ৩৬, ৪২, ৪৮, ৫৪, ৬০, ৬৬, ৭২…..
  • ৮= ৮, ১৬, ২৪, ৩২, ৪০, ৪৮, ৫৬, ৬৪, ৭২, ৮০………

আরও পড়ুনঃ
 গ.সা.গু কাকে বলে?

এখানে ৬ এবং ৮ এর মধ্যে ২৪, ৪৮, ৭২ এর মিল পাওয়া যায়। আর এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ২৪। তাই ৬ এবং ৮ এর লসাগু ২৪ কারণ এটি ৬ এবং ৮ উভয়ের গুণিতক।

গুণিতক বের করার নিয়ম :-

১) যদি দুইটি সংখ্যার মধ্যে একটি অপরটির গুণিতক হয়, তাহলে সেই সংখ্যাই অপর সংখ্যার গুণিতক। যেমন- ১২ এর গুণিতক ৬। তাহলে ৬ ও ১২ এর গুণিতক ৬।

২) যদি একটি সংখ্যা অন্য দুইটি সংখ্যার গুণিতক হয়, তাহলে সেই সংখ্যা ঐ দুইটি সংখ্যারও গুণিতক। যেমন - ৮ হল ৪ এবং ৬ এর গুণিতক। তাহলে ৮, ৪ ও ৬ এর গুণিতক ৮।

৩) একাধিক সংখ্যার গুণিতক হিসেবে ১ বিবেচিত হয়। যেমন -৫, ৭ ও ৯ এর গুণিতক ১।

৪) একই সংখ্যার গুণিতক হিসেবে তার নিজের চেয়ে ছোট কোন সংখ্যা গ্রহণ করা যায় না। যেমন - ৮ নিজের গুণিতক হিসেবে ৪ গ্রহণ করতে পারে না।

৫) দুইটি পরস্পর প্রাইম সংখ্যার কোন গুণিতক থাকে না। যেমন - ৭ ও ১১ পরস্পর প্রাইম, তাদের কোন গুণিতক নেই।

৬) গুণিতক হিসেবে ০ সব সংখ্যার জন্য বৈধ। অর্থাৎ ০ সব সংখ্যার গুণিতক।

এসব নিয়ম মেনে চললে সংখ্যার গুণিতক সহজে বের করা যায়।

গুণিতক এর বৈশিষ্ট্য :-

১) গুণিতক হল এমন একটি পূর্ণ সংখ্যা যা অন্য একটি পূর্ণ সংখ্যাকে শূন্য বাকি রেখে ভাগ করে।

২) গুণিতক সর্বদা ভাগফলের চেয়ে সমান বা বড় হয়।

৩) ১ কোন সংখ্যার গুণিতক হতে পারে না, কিন্তু সব সংখ্যার গুণিতক হিসেবে ১ বিবেচিত হয়।

৪) একই সংখ্যার একাধিক গুণিতক থাকতে পারে।

৫) দুইটি পরস্পর প্রাইম সংখ্যার কোন গুণিতক থাকে না।

৬) গুণিতক হিসেবে ০ সব সংখ্যার জন্য বৈধ।

৭) দুইটি সংখ্যার সর্বোচ্চ সাধারণ গুণিতক হল তাদের লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক।

৮) গুণিতক ব্যবহার করে ভাগশেষ বের করা যায়।

এগুলো গুণিতকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা একটি সংখ্যার ভাগ করার মতো কাজে ব্যবহৃত হয়।

গুণিতক এর গুরুত্ব ও ব্যবহার :-

গুণিতক এর গুরুত্ব নিম্নরূপ:

১) গুণিতক ব্যবহার করে দুইটি সংখ্যার মধ্যে সাধারণ গুণিতক এবং লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বের করা যায়। এগুলো অনেক গণিত সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়।

২) গুণিতক ব্যবহার করে দুইটি সংখ্যার মধ্যে ভাগশেষ বের করা যায়।

৩) একই সংখ্যার বিভিন্ন গুণিতক থেকে সংখ্যার গুণগুলো সনাক্ত করা যায়।

৪) গুণিতক ব্যবহার করে একটি সংখ্যা প্রাইম নাকি কম্পজিট তা চিহ্নিত করা সম্ভব।

৫) গুণিতক ব্যবহার করে একটি সংখ্যার ঘাত এবং বর্গমূল বের করা যায়।

৬) বিভিন্ন সংখ্যার সাধারণ গুণ বের করতে গুণিতক ব্যবহার করা হয়।

৭) গুণিতক দিয়ে সংখ্যালিন মান সাজানো যায়।

এভাবে গুণিতক অনেক গণিত সমস্যা সমাধান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ